Select Page

দেখে এলাম নিঃস্বার্থ ভালোবাসাঃ WhAt Is LoVe

দেখে এলাম নিঃস্বার্থ ভালোবাসাঃ WhAt Is LoVe

580259_545553875493683_1041496721_n

গত বছর বান্ধবীকে নিয়ে অনন্ত জলিলের “মোস্ট ওয়েলকাম” সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। এর আগে ‘স্পীড‘ নামক সিনেমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল মোস্ট ওয়েলকাম দেখার মূল প্রেরণা। সিনেমা হলে গিয়ে হাসতে হাসতে উল্টে পড়ে গেছিলাম। চরম বিনোদনে ভরপুর ছিল সিনেমাটি। নিঃস্বার্থ ভালোবাসার নাম, প্রচার এবং প্রসার দেখে ধরেই নিয়েছিলাম এবারও সিনেমাটি ফাটাফাটি রকমের হিট হবে। অবশেষে গতকাল সিনেমাটি দেখে এলাম। দুর্দান্ত সব স্পেশাল ইফেক্টের ব্যবহার, ভারতের শান এবং কৈলাস খের-কে দিয়ে গাওয়ানো গান, দেশ বিদেশের লোকেশন, একশন সব মিলিয়ে কমার্শিয়াল সিনেমার সবকিছুই ছিলো এই সিনেমাতে।

কিন্তু সিনেমাটি শেষ পর্যন্ত দেখতে গিয়ে আমার যা মনে হল, সিনেমা মূল কাহিনী যেন বা অন্তত এবং বর্ষার বাস্তব জীবনের থেকে নেওয়া হয়েছে। সিনেমায় অনন্তের নাম অনন্তই এবং বর্ষার নাম মেঘলা। কাহিনীতে দেখা যায় অন্তত একজন সফল ব্যবসায়ী ও বিখ্যাত অভিনেতা। মেঘলা সুন্দরী এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী মেয়ে। মফস্বল থেকে সে রাজধানীতে এসেছে শোবিজে ক্যারিয়ার গড়তে। অনন্তের সাহায্য নিয়ে কিংবা বলা যায় অনন্তকে অবলম্বন করে সে ক্যারিয়ার গড়তে সক্ষম হয়। অন্ততর মন জয় করতে সে ব্যাকুল থাকে। অন্তত তাকে একসময় প্রেমিকা হিসেবে গ্রহণ করে। অন্তত মেঘলাকে শোবিজে ব্রেক দেয়, ফ্ল্যাট-গাড়ি কিনে দেয়, মেঘলার দরিদ্র পরিবারের দায়িত্ব নেয়।

এরপর সিনেমার ভোল পালটে যায়। দেখা যায়, মেঘলা আরও বিখ্যাত সুপার মডেল হওয়ার জন্যে, প্রতিষ্ঠিত হওয়ামাত্র অন্য পুরুষের সঙ্গে প্রেম শুরু করে, রাত বিরাতে যে কোন পার্টিতে দিয়ে মদ্যপ হয়, অন্ততের কাছ থেকে গোপনে মিশা সওসাদরের সাথে মডেলিং এর চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। নিজের পরিবারের সাথে জঘন্য আচরণ করে। এ সব ব্যাপারে ধরা পড়ে গেলে সে অনন্তের সাথে রাগ, জেদ দেখায়, দুর্ব্যবহার করে। অনন্তর দেওয়া ফ্ল্যাট থেকে অনন্তকেই বের করে দেয়। পরে প্রতিবার বিপদে পড়লে অনন্তর কাছে বার বার ক্ষমা চায়। পা ধরেও ক্ষমা চায়, এমন আর হবে না শপথ করে এবং আবারও একই ধরণের কাজ করে। করেই যায়… অর্থাৎ সিনেমায় কাবিলা, বা মিশা সওদাগর ছিল নাম মাত্র ভিলেন। মূল ভিলেন আসলে মেঘলা বা বর্ষাই।

অন্তত মদ পান করে না, সিগারেট খায় না, পর নারীর প্রতি আসক্ত না, দানবীর, সহনশীল, ধনী অথচ চরিত্রবান, ক্ষমাশীল, কোন পার্টিতে যায় না, মৃত বাবার উপদেশ অমান্য করে না। সব জেনেও মেঘলার নামে নিজের সব সম্পত্তি দিয়ে যায় কারণ তার ভালোবাসা নিঃস্বার্থ… ইত্যাদি ইত্যাদি……

আমার কাছে মনে হয়েছে সম্পুর্ন সিনেমায় মেঘলা তথা বর্ষাকে বা নায়িকা চরিত্রটিকে এবং একই সাথে মেয়েদের অপমানিত করা হয়েছে। আমার জানতে ইচ্ছে হয় বর্ষার এমন চরিত্রে অভিনয় করার সময় কি কিছুই মনে হয় নি? নূন্যতম আত্নসম্মান বোধও কাজ করে নি? সিনেমায় মেঘলা চরিত্র বলতে আসলে যা ছিলো তাকে চরিত্র বলে না, তাকে চরিত্রহীনা বলা যেতে পারে। “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা” সিনেমাটির নাম করণের স্বার্থকতার জন্যে মেঘলা চরিত্রটিকে পচাতে পচাতে একদম মাটির তলে গেড়ে দিয়েই যেন অন্ততর ভালোবাসাকে নিঃস্বার্থ প্রমাণ করতে হয়েছে।

আমি একজন দর্শক হিসেবে এই সিনেমাটি দেখতে গিয়ে শুধুমাত্র দর্শকের ক্যাটাগরিতে থাকতে পারি নি। একজন মেয়ে/ নারী হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে এই সিনেমায় মেঘলা চরিত্র তথা মেয়েদের কে humiliate করা হয়েছে। অন্ততর চরিত্রর ব্যাপকতা, সততা, অন্যান্য গুণ নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু মেঘলাকে স্বাধীন, পরিশ্রমী একজন পেশাজীবী হিসেবে নির্মাণ করার পরিবর্তে লোভী-স্বেচ্ছাচারী, চরিত্রহীন হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে এতে আমার আপত্তি। অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন অন্ততর সিনেমা নিয়ে এত চিন্তা ভাবনা করার কী আছে? ওদের কাজ ভুল ভাল ইংলিশ বলা, আমাদের বিনোদনের জন্যে ফাটাফাটি ধিঞ্চাক মার্কা সিনেমা বানানো এই থেকে এত ভাবনা বা লেবু কচলানো কেনো?

কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, যে দেশের রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক পর্যন্ত হলে গিয়ে অনন্ত জলিলে সিনেমা দেখে, যেখানে গ্রামীণ ফোনের মত কোম্পানি অনন্ত-বর্ষাকে তাদের ব্র্যান্ড এম্বাসাডর বানায় সেখানে এমন সুপারহিট সিনেমার আফটার এফেক্ট কোথায় গিয়ে ঠেকবে ভেবে দেখেছেন তো?

সব ধরণের দর্শকের প্রশ্ন করতে চাই, যারা যারা সিনেমাটি দেখেছেন তাদের কাছে এই সিনেমা বিনোদনের প্যাকেজ বাদে আর কিছুই এলার্মিং মনে হয় নি?


৪ টি মন্তব্য

  1. Anwar Hossain Forhad

    কোন মেয়ের কাছ থেকে এ সিনেমার একটা পাঠ আশা করতেছিলাম। আপনার লেখায় সেটা পেলাম। অনন্ত নিজের চরিত্রের স্বার্থে মেঘলা চরিত্রকে নির্মমভাবে বলি দিয়েছে। ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ নিয়ে একটা রিভিউতে এইটা উল্লেখ করছিলাম(লেখাটা এইখানে পাবেন-http://www.priyo.com/node/27963)।

    তবে সমাজে যে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব এইটা নিয়ে লেখাটায় আলোচনা করা হয় নাই। এ সুযোগে একটু বলে ফেলি। আমরা আসলে একটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করছি। শুধু অনন্ত না কম বেশি আমাদের সবার মধ্যেই ব্যাপারটা আছে।

    হলে বসে যখন ছবিটা দেখছিলাম দর্শকদের প্রতিক্রিয়া কেমন সেইটা খেয়াল করলাম। দেখলাম মেঘলা যখন বার বার অনন্তকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিল দর্শকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছিল। আর মেঘলার অপর প্রেমিক যখন তাকে প্রত্যাখান করে তখন পুরো হল উল্লাস করে উঠল। বুঝেন অবস্থা।

  2. দারাশিকো

    নিঃস্বার্থ ভালোবাসা তো অনেক মেয়েই দেখেছে, হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়েছে, ফেসবুকে লাইক কুড়িয়েছে – কিন্তু এরকম একটা লেখা কেউ লিখেনি। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা চলচ্চিত্রের যে গল্প – সেটা একজন নারীর দৃষ্টিকোন থেকে কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
    থ্যাংকু একুপা (একুয়া রেজিয়া) – এ ধরনের একটা পোস্ট প্রয়োজন ছিল।

  3. ShifanDotMovie

    আমার কাছে এই ব্যাপারটার পাশাপাশি আরেকটা ব্যাপার খুব ভালভাবে খেয়াল করেছি যে ,এখানে অনন্ত বোঝাতে চেয়েছে যে সেই একমাত্র সুপারস্টার ,বাংলাদেশে আর কোন সুপারস্টার নাই ।যা সত্যিই হতাশাব্যঞ্জক ।আর অভিনয়ের কথা কি বলব ?? অভিনয়ের বিচারে তাকে স্টার উপাধি দিলেতো অন্যায় হবে ,সেখানে সুপারস্টার !!!

মন্তব্য করুন