Select Page

পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী: বারবার দেখবো, তবুও মন ভরবে না

“পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী”
পরিচালক : সাফিউদ্দিন সাফি
কাহিনি ,চিত্রনাট্য ও সংলাপ : রুম্মান রশিদ খান
প্রযোজনা : ফ্রেন্ডস মুভিজ ইন্টারন্যাশনাল
গীতিকার : কবির বকুল
সুর ও সংগীত :শওকত আলী ইমন ও কৌশিক দাস
অভিনয় : শাকিব খান ,জয়া আহসান ,রাজ্জাক ,আনোয়ারা ,আরেফিন শুভ ,মিমো ,দিতি ,সূব্রত ,সাজু খাদেম অতিথি শিল্পি সোহেল রানা এবং ববিতা ।

আমার পরম পাওয়া রুম্মান রশিদ খান যিনি এই মুভির কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচয়িতা তার সাথে মধুমিতা হলে বসে মুভিটি দেখা। সাথে আরও ছিলেন নাট্যপরিচালক চয়নিকা ম্যাডাম এবং Shakib Khan “Official Page” এর এডমিন প্যানেল মিফতাহ ভাই, শাওন ভাই, শুভ ভাই, বিপুল ভাই, শিফান ভাই এবং শাকিব খানের কাজিন মিজান ভাই। তুহিন ভাই, সাদ্দাম ভাইকে খুব মিস করেছি।

গতকয়েক দিন আগে এই মুভির পেছনের গল্প পড়েছি রুম্মান ভাই এর স্টাটাস থেকে যিনি এই মুভির কাহিনি চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচয়িতা। তখন্খই বুঝেছি দারুন একটা কিছু পেতে যাচ্ছে আমাদের ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রি ।

কাহিনি সংক্ষেপ :
দুই নাতি নাতনি শাকিব খান ও মিমো কে নিয়ে রাজ্জাক এবং আনোয়ারার সুখের সংসার। রাজ্জাক ও আনোয়ারা বিয়ে দিতে চান শাকিব আর মিমোর। বিয়েতে তারা রাজি হয় কিন্তু ছোট মেয়ে দিতির কথা ভেবে রাজ্জাক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন শাকিব খান তার ফুপুর চলে যাওয়ার কথা জানতে পারে।  ফেসবুকে তার ফুপুকে খুঁজে পান শাকিব এবং জানতে পারেন তিনি মালয়েশিয়াতে। ফুপুকে ফিরিয়ে আনতে শাকিব আসেন মালয়েশিয়াতে।সেখানে দেখা হয় জয়া আহসানের সাথে যিনি এই মুভির নায়িকা। অতঃপর লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট গোস টু রোমান্স অ্যান্ড ____ বাকি কাহিনি জানতে হলে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখুন এইসময়ের সবচেয়ে সাড়াসাগানো রোমান্স ধামাকা “পূর্নদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী” ।

১.কাহিনী চিত্রনাট্য ও সংলাপ :
এই মুভির কাহিনী এককথায় অসাধারন ,বিশেষ করে মুভিটির গল্প বলার স্টাইল আধুনিক ও ব্যাতিক্রম যা মুভিটিকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। রুম্মান রশীদ খান চমৎকারভাবে তার গল্পকে সাহিত্যের ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছেন যার চিত্রনাট্যের প্রতিটি ভাজে ভাজে সাজানো ছিল দর্শককে গল্পের মাঝে ধ্যানমগ্ন করে রাখার মন্ত্র, আকুতি জাগায় পরবর্তী দৃশ্য দেখার জন্য যাতে সফল রুম্মান রশিদ খান। সংলাপের ক্ষেত্রে বলতে হয় খুবই রুচিশীল, আধুনিক, আকর্ষনীয় জোশ সংলাপ লিখেছেন রুম্মান রশিদ খান। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না, স্যালুট বস ।

২.পরিচালনা :
এই মুভির পরিচালক সাফিউদ্দিন সাফি কে সাধুবাদ দিতে হয় এত সুন্দর একটা মুভি উপহার দেওয়ার জন্য। তিনি তার মেধা শ্রম মনপ্রান উজাড় করে ঢেলেছেন এই মুভিতে। বলা যায় তিনি ১০০% সফল ।

৩.গীত ও সংঙ্গীত :
এই মুভিতে অসাধারন গান লিখেছেন কবির বকুল ।প্রতিটি গানের কথা এতটা জোরালো যে দর্শকের কানে খুব দ্রুত পৌছেঁ গেছে আর যার সুরের ঝংকারে কথাগুলো আরো শ্রুতি মধুর হয়ে দর্শকের হৃদয়ে বাজিয়েছেন তিনি শওকত আলী ইমন ও “আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো” গানটির সুর করেছেন কৌশিক দাস। প্রতিটি গানে দশর্ক হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানিয়েছে আর মুর্গ্ধ হয়ে শুনেছে। এই মুভির ‘আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো’ এবং ‘ও প্রিয় আমি তোমার হতে চাই’ গান দুটি এখন দর্শকের মুখে মুখে ।

৪.অভিনয় :
অভিনয়ের কথা এই মুভিতে আর কি বলবো।বাংলাদেশের তারকা ,মহাতারকার মিলনমেলার হাট বসেছে একসাথে এই মুভিতে। ববিতা আর সোহেল রানার কথোপকথনে এগিয়ে গেছে গল্ব। মুভির চরিত্র পরিচিতি হতে শুরু করে ইন্টারভেল, ড্রামা, সাসপেন্স ও সমাপ্তি টেনেছেন এই দুই তারকা যা আমাদের দেশে প্রথম। অনেকদিন পর রাজ্জাক ও আনোয়ারাকে একসাথে অনস্ক্রিন খুব ভাল লেগেছে।

হিরো হিসেবে শাকিব খান যে নাম্বার ওয়ান তিনি এই মুভিতেও তার সাক্ষর রেখেছেন। নিজেকে আপাদামস্তক ভেঙ্গে ফেলে তৈরি করেছেন আরেক শাকিব খানকে। হেয়ার স্টাইল, পোশাক আশাক , এক্সপ্রেশন, ডায়লগ ডেলিভারি এককথায় অসাম । আর শাকিব খানের অভিনয় নিয়ে কোন কথা হবে না, এই জায়গায় তিনি খুব সিনসিয়ার, তার সমকক্ষ অভিনেতা ঢালিউডে খুব কমই আছে। জয়া আহসান বানিজ্যিক মুভিতে এটাই তার প্রথম কাজ।আমরা সবাই জানি তিনি খুব ভাল অভিনেত্রি। এই মুভিতেও অভিনয়ে তার কোন কমতি নেই। গ্লামার, নাচ, গান, সবকিছু মিলিয়ে জয়াকে নতুন করে আবিস্কার করেবে দর্শক “পূর্নদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী”তে। আরেফিন শুভ উদীয়মান নায়ক এটাই তার প্রথম মুভি। তিনি খুবই চমৎকার অভিনয় করেছেন, নতুন বলে তার মাঝে কোন জড়তা ছিল না। দিতি, সুব্রত, মিমো স্ব স্ব চরিত্রে তারাও ছিলেন বেশ উজ্জল। সাজু খাদেমের কথা না লিখলে চরম অন্যায় করা হবে। তিনি তার সংলাপ ও অভিনয় দিয়ে দর্শকদের বেশ আনন্দ দিতে সক্ষম হয়েছেন

৫. কোরিওগ্রাফি :
এই মুভির কোরিওগ্রাফি অসাধারন। সুন্দর শ্রুতিমধুর গানের সাথে পারফেক্ট কোরিগ্রাফি দশর্ক বিস্মিত হয়ে দেখেছে ।

৬. পোস্ট প্রডাকশন : 
মুভিটির সম্পাদনার কাজে কোন ফাকঁ রাখেনি প্রযোজনা সংস্থা ফ্রেন্ডস মুভিজ ইন্টারন্যাশনাল। পোস্ট প্রডাকশনের কাজ হয়েছে ভারতের চেন্নাইতে। উন্নত সাউন্ড, ঝকঝকে পিকচার দেখে মনে হয়েছে কোন বিদেশি মুভি দেখছি। বাস্তবিক হচ্ছে এটা আমাদের দেশের মুভি ফ্রেন্ডস মুভিজ ইন্টারন্যাশনাল তা প্রমান করেছেন ।

৭.উপসংহার : 
সবার সম্মলিত চেষ্টার একটি সফল সমাপ্তি “পূর্নদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ – দর্শকের মূহুমূহু করতালি আর ভালবাসায় সিক্ত হয়েছে মুভিটি। পরিশেষে আর কি লিখবো – এক কথায় বলছি, একবার দেখেছি, আরেকবার দেখবো,  বারবার দেখবো, তবুও মন ভরবে না – আরও ভালো কিছু মুভি পাওয়ার আশা বাড়িয়ে দিল ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’।


৩ টি মন্তব্য

  1. রাজন আহমেদ মৃধা

    আজকের বিনোদন সারাদিন রির্পোট দেখলে বুঝতে পারতেন কতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে পূর্নদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ।

  2. robiulrana

    অফিস পালিয়ে দেখতে যাওয়া পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনীটি নানা কারনে চিরায়ত পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি হয়ে উঠেছে। সাকিব খানের ছ্যাবলামির সাথে সাথে নির্মাতাদের অত্যন্ত পছন্দের মুখের রঙ, মাথার খুলির উপর পড়া কুৎসিত পরচুলা ছবিকে করেছে দর্শননিন্দিত। আলেয়া বুড়ি আনোয়ারার মাথায় কচি কচি বাল!!!!!!! শুভ যদি কোন কারনে চলচ্চিত্রে থিতু হতে পারে, তবে এই ছবি তার ক্যারিয়ারের কালো তালিকায় থাকবে, জয়াকে ভাল লেগেছে। হাতির ঝিল হয়ে গেল মালয়েশিয়া এতবড় গাজাখুরি করার আগে নির্মাতাদের চিন্তা করা উচিত দর্শকরা সচেতন হয়েছে। ছবিতে ব্যবহৃত মালয়েশিয়ার অফিসে শুভর ল্যাপটপটিতে যে জুম আল্ট্রা মডেম ব্যবহৃত হয় তাও নজর এড়ায় না। ভূল ধরলে ছবি দেখার স্বাদ নষ্ট হয় কিন্তু চিরায়ত বাংলা ছবির হার্ট এ্যাটাকের মত বেমানান দৃশ্যসহ অতি সাধারন ভুলগুলো এ ছবিতে থাকবে না এরকম একটা ক্ষীণ প্রত্যাশা ছিল। বিশেষ করে যখন এ ছবির কাহিনীকার যথাক্রমে বলিউড হাঙ্গামা, হিন্দুস্থান টাইমস, জিং টিভি ও ইন্টারনেট অবলম্বনে রুম্মান রশিদ খান…

মন্তব্য করুন