Select Page

দৃষ্টিতে চাষী নজরুল ইসলাম

1409670999_8‘রেডিও ভাই‘ নামের একটা টিভি নাটক হয়েছিল আমাদের বাড়িতে, খুব ছোটবেলায় তখন দেখেছিলাম চাষী নজরুল ইসলামকে। মেজাজী ডিরেক্টর, শুটিং এর সময় কোনরকম ডিস্টার্ব করলে কাউকে ছাড় দিতেন না। এরপর আমাদের বাড়িতে শুটিং হল নাটক ‘শিল্পী’। কাজী নজরুল ইসলামের দৌহিত্র সুবর্ণ কাজী সে নাটকে অভিনয় করেছিল এখনো মনে আছে। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সিনেমা ‘মেঘের পরে মেঘ’র প্রায় ৬০ ভাগ শুটিং হল আমাদের চিওড়া কাজী বাড়িতে। রাবেয়া খাতুনের উপন্যাস অবলম্বনে ‘মেঘ এর পরে মেঘ’ মেইনস্ট্রীমে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের এক অন্যতম সিনেমা।
200px-Shuva_film

উনার স্ত্রী কাজী জ্যোৎস্নাসহ এসেছিলেন আমাদের বাড়ির নিয়মিত আয়োজন-‘চিওড়া কাজী বাড়ি ঈদ পুনর্মিলনী’তে, সেবারই প্রথম চাষী নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল যদিও আমি তখনো ছোট ছিলাম। কাজী মোহাম্মদ আলী কাকা চাষীর ‘শাস্তি’, ‘সুভা’সহ কয়েকটি ছবিতে কাজ করেছেন এবং চাষীর ভক্ত শ্রেণীর মধ্যে অন্যতম বলা চলে; তো তিনি একবার চাষী নজরুল ইসলামকে চিওড়াবাসীর পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়ার আয়োজন করেছিলেন তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান দেখছিলাম, তো হঠাৎ করে শুনি মাইকে আমাকে মঞ্চে ডাকা হচ্ছে চিওড়া কাজী বাড়ির পক্ষ থেকে চাষী নজরুল ইসলামকে ক্রেস্ট তুলে দেবার জন্য। দুরুদুরু বুকে মঞ্চে উঠলাম। চাষী সদা সহাস্যমুখে ক্রেস্ট নেয়ার পর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

Devdas_2013

এরপর চাষী নজরুল ইসলামের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি তাকে দেখিওনি সশরীরে আর। ইউনিভার্সিটিতে উঠার পর যখন ফিল্ম সোসাইটি করা শুরু করলাম এরপরই চাষী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে জানলাম, পড়লাম, দেখলাম। ‘চোখ ফিল্ম সোসাইটি’র ম্যাগাজিন ‘প্রক্ষেপণ’ প্রকাশের আগে চাষী নজরুলের সাথে ফোনে কথা হয়েছিল শেষবারের মত। উনার কাছে একটা লেখা চেয়েছিলাম, অনেক সুন্দর করে বুঝিয়ে বললেন লেখার সময় নেই তার তখন। তারপর আমতা আমতা করে উনার সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা বললাম। উনি বলেছিলেন ঢাকায় এসে যেনো উনার সাথে দেখা করি তখন উনি ‘দেবদাস’ (দ্বিতীয়বার) মুক্তি নিয়ে ভীষণ ঝামেলায় ছিলেন তাও বললেন।পত্রিকা পড়ার সুবাদে জেনেছিলাম চুনিলালের (শহীদুজ্জামান সেলিম) বিশেষ পোশাক সরকারকে বিব্রত(!) করেছিল তাই চাষীর ছবিকে মহামান্য (!!) সেন্সর কর্তৃপক্ষ আঁটকে দিয়েছিল। সাক্ষ্যাৎকার রেডি করা, উনার সম্পর্কে স্টাডি করা, ক্লাস-এক্সাম, আলসেমি করে আর ঢাকা গিয়ে উনার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়নি।

Shasti

চাষী নজরুল ইসলাম চলে গেছেন বলে ভালো ভালো কথা বলতে চাই না শুধু এটুকু বলতে চাই মুক্তিযুদ্ধের উপর সর্বোচ্চ ফিচার ফিল্ম নির্মাণের এই যোগ্য মহানায়ক যিনি নিজে যুদ্ধ করেছেন এবং সর্বপ্রথম মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা নির্মাণ করেছেন ‘ওরা ১১জন’। নির্মাণ করেন ‘সংগ্রাম’, ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘ধ্রুবতারা’ ও ‘কমলাপুরের যুদ্ধ’। সাহিত্যনির্ভর সিনেমা নির্মাণেও ছিলেন এগিয়ে। শরৎচন্দ্রের -‘দেবদাস’, ‘শুভদা’ ‘চন্দ্রনাথ’; বঙ্কিমের- ‘বিরহ ব্যাথা’ ও ‘বিষবৃক্ষ’ রবীন্দ্রনাথের রচনা নিয়েও কয়েকটি কাজ করেছেন চাষী এর মধ্যে ‘শাস্তি’, ‘সুভা’ অন্যতম। বানিয়েছেন টিভি নাটক ও ডকুফিল্ম। অন্যসব কিছু বাদ দিলেও শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের সিনেমাকার হিসেবেই চাষী নজরুল ইসলামকে বারবার স্মরণ করতে হবে আমাদের। এই বাংলায় সবসময় বেচে থাকুক নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম ও তার সৃষ্টিকর্ম। ছোটবেলায় উত্তমকুমার হতে চেয়েছিলেন শেষে নির্মাতা হয়ে সৃজন করলেন অসাধারণ অনেক মহৎ কর্ম, এই শিল্পস্রষ্টার আত্নার শান্তি কামনায়…

লেখক: কাজী ইব্রাহিম পিয়াস


মন্তব্য করুন