Select Page

জীবনের ওপারে সালমানের ছয় পরিচালক

জীবনের ওপারে সালমানের ছয় পরিচালক

Salman-Shahগুণে গুণে ১৯টা বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। ধূসর হয়ে গেছে স্মৃতির পাতা। তবু যেন সব অমলীন। মনে হয় এইতো সেদিন বাংলা চলচ্চিত্রের যুবরাজ রাজত্ব করেছেন। সেটা এমন রাজত্ব যার শাসনকাল অনন্তকাল। মাত্র তিন বছরের ছোট্ট ক্যারিয়ারে তাঁর অভিনীত ২৭টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল- ছবিগুলোর পরিচালক ছিলেন মোট ২৪জন। এদের মধ্যে ৬ জন এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন- তাঁদের নিয়ে এ বিশেষ আয়োজন।

সালমান-শাবনূর জুটির প্রথম ছবি ‘তুমি আমার’। বর্তমান সময়ের আলোচিত সমালোচিত চিত্রনাট্যকার আবদুল্লাহ জহির বাবু’র বাবা জহিরুল হক ছবিটির পরিচালক ছিলেন। কিন্তু শুটিং চলাকালীন তিনি মারা যান ১৯৯৩ সালের ২৫শে নভেম্বর । পরবর্তীতে ছবিটি শেষ করেন সালমান শাহ’কে নিয়ে নির্মিত ‘আশা ভালোবাসা’ ছবির নির্মাতা তমিজুদ্দিন রিজভী। মৌসুমী অজানা কারণে সালমানের সাথে ছবি করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরিচালক শাবনূরকে নিলেন। কিন্তু তাঁর প্রথম ছবি ‘চাঁদনী রাতে’ ফ্লপ হওয়ায় প্রযোজক রাজি না হওয়ায় তিনি শাবনূরের উপর ঝুঁকি নিলেন। ফলাফল দর্শক লুফে নিল। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালের ২২ মে। ছবিটির ‘জ্বালাইয়া প্রেমের বাত্তি কোথায় তুমি থাকোরে’, ‘একদিন তোমায় না দেখিলে’ গানগুলো এখনও মানুষের মুখে মুখে। এ ছবিটি ‘সুপারহিট’ হওয়ায় সালমান-শাবনূর পরবর্তীতে একে একে ১৪টি ছবি করেন।

রোমান্টিক ছবির জনপ্রিয় পরিচালক শিবলী সাদিক সালমান শাহকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘আনন্দ অশ্রু’। এগুলোতে সালমানের বিপরীতে ছিলেন মৌসুমী, শাবনাজ ও শাবনূর।  ‘অন্তরে অন্তরে’ মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালের ১০ জুন। সুপারহিট পরিচালক হিসেবে শিবলী সাদিকের বক্স অফিসে বিশাল প্রভাব, সালমান-মৌসুমী জুটির প্রথম ছবি সুপারহিট, আলম খানের সুর করা কিছু অসাধারণ গান- ফলাফল ছবিটিও সুপারহিট। ‘মায়ের অধিকার’ মুক্তি পায় সালমান শাহ’র মৃত্যুর বছর- ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর। এটিও সুপারহিট। সালমান শাহ মৃত্যুর কারণে ‘আনন্দ অশ্রু’র শুটিং আটকে যায়। পরবর্তীতে তাঁর ডামি দিয়ে গানের শুটিং শেষ করা হয়। অনেক জোড়াতালি দিয়ে শেষ করা হলেও এ ছবিটিও সুপারহিট। এ গুণী নির্মাতা মারা যান ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি।

১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় ‘বিক্ষোভ’। ‘ছাত্র রাজনীতির নামে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের গল্প ছিল এটি। মহম্মদ হান্নান সালমান শাহ’র ‘রোমান্টিক হিরো’ ইমেজ ভেঙ্গে ‘প্রতিবাদী নায়ক’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। ছবিটি ‘একাত্তরের মা জননী’ এখনও সাধারণ মানুষের কাছে দেশাত্ববোধক গান হিসেবে অনেক জনপ্রিয়। শক্তিশালী গল্প ও চিত্রনাট্যের কারণে এ ছবির টিকেট না পেয়ে ‘হাউজফুল’ বোর্ড দেখে দর্শকদের মারামারির খবর তখনকার পত্র-পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিল। মহম্মদ হান্নান মারা যান ২০১৪ এর ২১ জানুয়ারি গ্রামের বাড়ি যাবার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।

‘সালমান শাহ’র মৃত্যু ও সালমান-শাবনূর জুটির তুমুল জনপ্রিয়তা- দুয়ে মিলে বাম্পারহিট ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’। এম এম সরকার পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালের ২০ ডিসেম্বর। ছবিটির ‘সাথী তুমি আমার জীবনে’ গানটিতে ব্যবহৃত ‘জিপসি বাইক’টি সালমানকে পরিচালক রেজা হাসমত উপহার দিয়েছিলেন। এটি তিনি চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে নিজে চালিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। এ ধরনের বাইকের ব্যবহার বাংলাদেশের ছবিতে ছিল প্রথমবারের মত। এছাড়া সালমান শাহ ছবিটিতে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন- যা কিনা বাংলাদেশের নায়কদের মধ্যেও প্রথম ছিল। এম এম সরকার মারা যান ২০১১ সালের ২৯শে ডিসেম্বর।

‘বিক্ষোভ’-এর পর সালমান অভিনীত দ্বিতীয় ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ছবি ‘মহামিলন’। দিলীপ সোম পরিচালিত ছবিটিতে ছাত্র রাজনীতির চেয়ে ‘পারিবারিক সেন্টিমেন্ট’ অনেক বড় করে দেখানো হয়েছিল। ছবিতে সালমানের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ববিতা। সালমান-শাবনূর তাড়ি খেয়ে মাতাল হয়ে ‘কাওয়ালা কি তালটা, লাগে উল্টা-পাল্টা’ শিরোনামের একটি গানে অংশ নেন- যেটি ব্যাপক আনন্দ দেয় দর্শকদের। দিলীপ সোম এর আগে শাবনূর-আমিন খানকে নিয়ে সুপারহিট ‘হৃদয় আমার’ উপহার দিলেও ১৯৯৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘মহামিলন’ ‘হিট’ এর পরবর্তী ধাপ পেরোতে পারেনি। দিলীপ সোম মারা যান ‘মহামিলন’ মুক্তির আগে ওবছরই।

সালমান পরবর্তীতে এক নাম্বার নায়কের আসনে বসেন রিয়াজ। তার আর সালমানের একসাথে একমাত্র ছবি ‘প্রিয়জন’। নায়িকা শিল্পী’র প্রথম ছবিও ‘প্রিয়জন’। ছবির ‘এ জীবনে আমি যারে চেয়েছি’ গানটি এখনও অনেক জনপ্রিয়। এত হিট গান থাকার পরেও ১৯৯৬ সালের ১৪ জুন মুক্তি পেয়ে ছবিটি খুব একটা ব্যবসা করেনি। ছবিটি পরিচালক রানা নাসের মারা যান ২০০২ সালে।

নিবন্ধটি ঢালিউড২৪‘এ পূর্বে প্রকাশিত।


মন্তব্য করুন