Select Page

সীমানা পেরিয়ে: যে ছবি পুরনো হয় না

সীমানা পেরিয়ে: যে ছবি পুরনো হয় না

বাংলাদেশের সেরা পরিচালকের নাম বলতে গেলে যে কয়েকজনের নাম অবশ্যই আসবে তাদের অন্যতম আলমগীর কবির। তার জীবনের সেরা ছবির নাম বলতে গেলে অবশ্যই আসবে সীমানা পেরিয়ে‘র নাম। ছবিটি এত সুন্দরভাবে তৈরি করেছিলেন যে এখনো ছবিটি দেখলে নতুন লাগে। প্রতিবার নতুন করে আবিষ্কার করা যায় ছবিটিকে। সংলাপ, গল্প, পোশাকসহ প্রায় সবদিকেই দেখা গেছে আধুনিকতা।

কাহিনী

মঞ্চ নাটক অভিনয় করে টিনা (জয়শ্রী কবির)। অভিনয় শেখার জন্য লন্ডন যাওয়ার ইচ্ছে তার। গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসে জানতে পারে তার মা বাবা আলাদা থাকার কারণ। গ্রামের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ রতন (গোলাম মুস্তাফা) মামার সাথে ঘুরতে গিয়ে জানতে পারে তার পরিবারের অনেক অতীত ইতিহাস। এক ঝড়ের কবলে পড়ে সে ভেসে গিয়ে আটকা পড়ে একটি দ্বীপে। সেখানে তার সাথে আটকা পড়ে তার পরিবার দ্বারা অত্যাচারিত কালু (বুলবুল আহমেদ)।

এসময় বুঝতে পারা গেল দ্বীপে মানববসতি নেই। ঝড়ে স্রোতের টানে দ্বীপে থাকা কালুর নৌকাটাও তারা হারিয়ে ফেলে। তখন টিনা বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন SOS ফ্লাগ, বোতলে চিঠি লিখে পানিতে ছুড়ে। বার্তা পাঠানো চেষ্ঠা করে ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে টিনা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কালু তাকে সেবা করে সুস্থ করে তোলে। তখন তারা পরিকল্পনা করে যে তাদের কাছে থাকা দ্রবের পরিমিত ব্যাবহার করে জীবন ধারণ করবে। তারা পাহাড়ের উপর ঘর তৈরি করে বসবাস করা শুরু। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমহয় ও বিয়ে করে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় মূল ভূ-খন্ডে ফিরে যাবেনা।

কিন্তু এক নৌবাহিনীর জাহাজ দূরবিনের মাধ্যমে তাদের দেখতে পায়। কালু ও টিনা পালাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তাদের মূল ভু-খন্ডে ফিরিয়ে আনা হয়। সেসময় টিনা জানতে পারে তার বাবা তারই বান্ধবীকে বিয়ে করেছে। টিনার বাবা কালুর সাথে বিয়ে না মানায় তারা দুজনে নিজের মত করে অজানা উদ্দেশে যাত্রা করে।

সিনেমাটির চিত্রগ্রহণ এত সুন্দর ছিল যে আপনার অনেক সময় মনে হতে পারে এটা ৯০ দশকের বা তার পরের ছবি। ছবিটার প্রেক্ষাপট যে কোন যুগের জন্যই উপযোগী। এযুগেও অনেকটা এরকম থিমকে নিয়ে ছবির গল্পে জুড়ে দেয়া হয়ে থাকে।

অভিনয়

এ ছবিতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশ একগুচ্ছ প্রখ্যাত অভিনয়শিল্পী। বাংলাদেশের মহানায়ক বুলবুল এর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন মিস কলকাতা জয়শ্রী কবির

বুলবুল আহমেদ: রোমান্সের দিক থেকে বুলবুল আহমেদ এর স্থান দেশের অন্য সবার থেকে আলাদা। স্বাভাবিক ভাবেই তাকে বেশির ভাগ ছবিতেই দেখা যেত শহরে বাস করা স্মার্ট ছেলের চরিত্রে। কিন্তু সীমানা পেরিয়েতে তার চরিত্র একেবারে উল্টো। গ্রামের অশিক্ষিত ছেলে তার উপর তোতলা। অনেক অভিনেতার ক্ষেত্রে দেখা যায় তোতলামীতে ভাড়ামী করে কিন্তু মহানায়ক বুরবুল আহমেদ কালু চরিত্রটি কোনরূপ ভাড়ামী বা ওভারঅ্যাক্টিং ছাড়া নিঁখুত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন।

জয়শ্রী কবির: মিস কলকাতা খ্যাত জয়শ্রী কবির প্রবাসী স্মার্ট মেয়ের চরিত্রে যেমন অভিনয় করেছেন, এমন অভিনয় অন্যদের কমই দেখা যায়। ইদানিং দেশে অনেক ছবিতে এই ধরনের চরিত্র থাকছে কিন্তু কেউ অতটা সাবলিল না যতটা না জয়শ্রী কবির। স্বামীর (আলমগীর কবির) নির্দেশনায় একেবারে নিঁখুত অভিনয়।

গোলাম মুস্তাফা: দেশের কীর্তিমানদের মধ্যে তিনি অন্যতম। অভিনয় করেছিলেন ইতিবাচক, ভিলেন উভয় চরিত্রে। অনেক সাবলীল ছিলেন সীমানা পেরিয়ে ছবির রতন মামা চরিত্রে। তার অভিব্যাক্তি ছিল অনন্যসাধারণ।

এছাড়াও ছোট চরিত্র গুলোতে ভুপেন হাজারিকা, মায়া হাজারিকা, তনুশ্রী অনেক ভাল করেছিলেন। সবার মাঝে ছিল যথেষ্ঠ স্মার্টনেস। যা সত্যিই যেকোনো সময়ের জন্য সময় উপযোগী।

গান

সীমানা পেরিয়ে ছবির গানগুলোতেও ছিল অনেক আধুনিকতার ছোয়া। “মেঘ থমথম করে” গানটা আজও অনেক সময় শোনা যায়। গানটার দৃশ্যপট, সুর, কথা এ সময়ের গানের সাথেও চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম। “বিমুর্ত এই রাত্রি” গানের মত রোমান্টিক গান কমই পাওয়া যায়। গানটি এখন পর্যন্ত সমান জনপ্রিয়। টিভি চ্যানেল বদলাতে গিয়ে এ গান শুনলে এখনো কিছুক্ষন থেমে মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনি। আর শুনতেই হবে কারণ এগানে কণ্ঠ শিল্পী তো আর যেন তেন কেউনা, পৃথিবীর ১৪টি ভাষায় গান করা বাংলাদেশী কন্ঠশিল্পী আবিদা সুলতানা। গানটি এ সময়ে মাহফুজ-জয়া অভিনীত অনিমেষ আইচের পরিচালিত “জিরো ডিগ্রি” ছবিতেও লক্ষ্য করা গেছে। গানের কোরিগ্রাফার ও পরিচালককে সাধুবাদ জানাতে হয় এমন একটা ছবি ও গানে কোন প্রকার যৌন উত্তেজনাকর দৃশ্য ছাড়াই তৈরি করার জন্য।

যারা এখনও ছবিটা দেখেননি তাড়াতাড়ি দেখে ফেলুন। রেটিং দিচ্ছিনা। কারণ আমি মনে করি সীমানা পেরিয়ে ছবির রেটিং দেয়ার দক্ষতা এখনও আমার হয় নি ।


মন্তব্য করুন