← রান আউট

মন্তব্য করুন।

১১টি রিভিউ

  1. অবশেষে মুক্তি পেয়েছে “পদ্মপাতার জল” খ্যাত পরিচালক তন্ময় তানসেনের বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র “রানআউট”। এই চলচ্চিত্রটি দেখার আগ্রহ ছিল এর ট্রেলার দেখার পর থেকেই। তাই আমার নিয়মিত চলচ্চিত্র দেখার সঙ্গি রাহিম, রাব্বি, মিনহাজ, কামরান, বিশ্ব, প্রসেনদের নিয়ে আজ দেখেও এলাম বহুল আলোচিত এই চলচ্চিত্রটি।
    মুক্তির আগেই রানআউট নিয়ে মূলত কয়েকটি কারণে বেশ আলোচনা সমালোচনা হয়। এর একটি কারণ এতে আইটেম গানে থাকা নতুন মডেল নায়লা নাইম। নায়লা নাইম যে কারণে বেশ জন-আলোচিত সেই কারণটি হয়ত পরিচালক বেশ ভাল ভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন এবং সেটিই তিনি কাজে লাগিয়েছেন। শুধুমাত্র একটি আইটেম গানে থাকা কোন মডেল কিভাবে সেই চলচ্চিত্রের মূল পোস্টার সহ প্রায় সব ধরণের পোস্টারে প্রধান চরিত্র(মৌসুমী নাগ)কে বাদ দিয়ে উপস্থিত থাকে সেটি আমার বোধগম্য হয়নি। তাছাড়া আইটেম গানে তার নাচ যথেষ্ট অপরিণত বুঝা যাচ্ছিল। অথচ নৃত্য পারে এমন কোন আবেদনমী নায়িকা হলে চমৎকার সে আইটেম গানটির সাথে বেশ বিনোদন দিতে পারতো।
    রানআউটের আবহ সঙ্গীত সহ সব গান ভাইকিংস ব্যান্ডের করা এবং দুটি গানে তাদের সাথে কন্ঠ দিয়ে কণা ও এলিটা। ব্যাপারটি চমৎকার লেগেছে। পরিচালককে এর জন্য সাধুবাদ। তাছাড়া এর চিত্র পরিচালকও তানসেনই ছিলেন। যা কিনা এই চলচ্চিত্রটিকে এক অনন্যতা দিয়েছে। গানের লোকেশন এবং বিভিন্ন দৃশ্যে তিনি এক নতুন বাংলাদেশকে(সম্ভবত চট্টগ্রাম ছিল) দেখিয়েছেন আর আমরা তা মুগ্ধ হয়ে দেখেছি।
    রানআউটের অভিনেতারা প্রায় সবাই আমার প্রিয়। তারিক আনামকে নিয়ে আর কি বলা যায়, দিনকে দিন ওনি যেন অভিনয়ের খনি হয়ে যাচ্ছেন যাকে যে চরিত্রই দেয়া হোক তিনি সে চরিত্রতেই শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে ছাড়বেন। আর রানআউটের ভিলেন তারিক আনাম যেন রীতিমত ত্রাস। চলচ্চিত্রটির পোস্টারে লিখা ছিল (১৮+) অর্থ্যাৎ আঠের বছরের নিচে কারোর চলচ্চিত্রটি না দেখাই ভাল। ব্যাপারটি সত্যিই তাই। এই চলচ্চিত্রে একটা বাজে সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে যা কিনা বড়রাই ভাল করে বুঝবে। তারিক আনামের সহ অভিনেত্রী মৌসুমি নাগ এই চলচ্চিত্রে নিজের অভিনয় দিয়ে আলো ছড়িয়েছেন। একটি সাধারণ ঘরের মেয়ে কাজের তাগিদে নিজের আত্মসম্মান বিকিয়ে ধীরেধীরে অপরাধ জগতে প্রবেশ করেও নিজের মাতৃত্ব আবার প্রেমিকা হয়ে টিকে থাকার যে লড়াই করেছেন সেটি উপভোগ্য। আর প্রথমবারের মত বানিজ্যিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করা ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা সজল নূরের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র রানআউটে অভিনয় ভাল ছিল। যদিও কাহিনীর ভয়ানক ফাঁদে পড়ে সজলের নায়ক চরিত্রটি অতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেনি কিন্তু তিনি যে বড় পর্দায় বেশ ভালভাবেই মানিয়ে নিতে পারবেন তা তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন। তার ফাইটিং আর সবমিলিয়ে এক্সপ্রেশন চমৎকার ছিল। এই চলচ্চিত্রে নায়কের প্রেমিকা চরিত্রে অভিনয় করা রোমানা স্বর্নাকে বেশ দূর্বল লেগেছে(কাহিনীর দূর্বলতার কারণে)। ওমর সানীর পুলিশ চরিত্রটি আসলে কি করতে চাচ্ছিল পরিষ্কার বুঝিনি। চলচ্চিত্রে অপর গডফাদার চরিত্রে তানভীর হাসান প্রবালকেও(কাহিনীর অপরিপক্কতার কারণে) আদতে বুঝতে পারিনি। তবে তার অভিনয় বেশ ভাল ছিল। আর সজলের মায়ের চরিত্রটির প্রয়োজনীয়তা কি ছিল সেটা একমাত্র পরিচালকই ভাল করে বলতে পারবেন। রানআউট চলচ্চিত্র শুরু থেকেই যত দ্রুত দর্শকের মাঝে আগ্রহের সৃষ্টি করেছিল আধাঘন্টা পর থেকে সেই আগ্রহটি তত দ্রুতই নেমে গিয়েছে। কাহিনী অনেকটা খেই হারিয়ে ফেলেছে। এবং শেষদিকে কাহিনী একেবারে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তবে মৌসুমি নাগের ছোট্ট কন্যাটি এই বয়সেই এত সাবলীল ছিল যে তাকে বিশেষভাবে মনে থাকবে।

    গ্রাম থেকে এসে শহরের ভাড়া বাড়িতে থেকে একটা ছোটখাট কাজ করা এক সাধারণ ছেলের ঘটনার প্রেক্ষিতে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ার গল্প নিয়ে রানআউট চলচ্চিত্রটি। গল্প লেখক সাদাত মাহমুদ পিন্টুর কাহিনীর ধাপের প্রতি আরেকটু মনযোগী হলে রানআউট চমৎকার কিছু হতে পারত। সবশেষে পরিচালক তন্ময় তানসেনকে অভিনন্দন এবং সাধুবাদ জানাই আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রকে উন্নতি করার চেষ্টা করার জন্য। তরুন নির্মাতাদের এই প্রয়াসই একদিন আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রকে অস্কারের মনোনয়ন এনে দেবে। হয়ত একদিন অস্কারই এনে দেবে।

রিভিউ লিখুন

আরও ছবি