Select Page

কেন ‘হলি বেকারি’?

কেন ‘হলি বেকারি’?

mostafa-sarwar-farookiচলচ্চিত্র বিষয়ক সংবাদমাধ্যমে ভ্যারাইটিতে নতুন সিনেমার ঘোষণা দিয়ে চমকে দিয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘হলি বেকারি’ সিনেমাটির পরিকল্পনা সাজিয়েছেন।

ভ্যারাটিকে এ নির্মাতা জানান, এ ছবিতে দক্ষিণ এশীয় রাজনীতির জটিলতা, ঘৃণার সংস্কৃতি, অসহিষ্ণুতার উত্থান, জঙ্গিবাদের উত্থান এবং বাংলাদেশের আধুনিক ও রক্ষণশীলদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব উঠে আসবে।

হলি আর্টিজানের ঘটনা নিয়ে ছবি বানানোর আগ্রহের কারণ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে ফারুকী বলেন, ‘অন্য বাংলাদেশির মতোই এই ঘটনা আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার এই মর্মান্তিক ঘটনা তাই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। নানা দিক থেকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টাও করেছি। আমার মনে হয়েছে, এটা কোনো সাদা-কালো গল্প নয়। এই গল্পে অনেক জটিল ছায়া আছে। এই ঘটনা আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। পুরো বিষয়টা আমাকে স্বাভাবিক হতে দেয়নি। এই ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়ার ও বিশ্ব রাজনীতির একটা ছাপ দেখেছি। এই জটিলতা আবিষ্কার করব বলেই ডুবুরি হলাম। ফিল্ম মেকিং তো ডুবুরির কাজই।’

এ কাজের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই। কিন্তু আমি তো ছবি বানাচ্ছি, ডকুমেন্টেশন করছি না। তথ্য হচ্ছে পোশাক। সিনেমার কাজ আত্মা নিয়ে। পোশাকের একটা সমর্থন তার লাগে বটে, তবে পোশাকটাই শুধু ছবি নয়।’

আপনি বলছিলেন এটি হবে ‘ওয়ান শট ফিল্ম’, পাঠকদের জন্য বিষয়টি কি একটু পরিষ্কার করে বলবেন?— এ প্রশ্নের উত্তরে ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ নির্মাতা বলেন, ‘ওয়ান শট মানে পুরো ছবিতে কোনো কাট থাকবে না, শুধু ক্যামেরা মুভমেন্ট থাকবে। দুই ঘণ্টা এক শটে, এক নিশ্বাসে। এই এক শটে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির জটিল অবয়ব, ঘৃণার সংস্কৃতি ও অসহিষ্ণুতার উত্থান, জঙ্গিবাদের উত্থান এবং প্রগতিশীল বাংলাদেশ আর তথাকথিত রক্ষণশীল মানসিকতার মানুষের বিভেদটা তুলে ধরতে পারব আশা করি।’

এদিকে নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে সিনেমা নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি ভ্যারাইটিকে (ফেসবুকে উদ্ধৃত) বলেন, ‘ফেলে আসা রাস্তা ভালোবাসি বটে, কিন্তু সেটা আমাকে কখনো এক্সাইট করে না। যে কাজ আমি করে ফেলেছি, যে সুরে গান একবার গেয়ে ফেলেছি, সেটা আর আমাকে চাঙা করতে পারে না। আমি উত্তেজিত হই ভবিষ্যতের গন্ধে। সামনে কী কী করবো সেটাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখে এবং সেই জন্যই আমি একসাথে এতো প্রজেক্ট মাথায়, হাতে, পিঠে নিয়ে ঘুরি।’

নিজের ভাবনাকে পরিষ্কার করেন এভাবে— ‘দর্শককে আমি মাথায় রাখি বটে কিন্তু কখনোই তার প্রচলিত পছন্দের কথা মাথায় রেখে নিজের বলবার ভঙ্গি বদলাই না। কারণ আমি বিশ্বাস করি না তাকে একবার যা গেলানো হয়েছে তার বাইরে গিয়ে সে আর কিছু চিন্তা করতে পারবে না। বরং আমি তার অনুভূতি শক্তি আর বুদ্ধিমত্তার উপর আস্থা রেখে তাকে নতুন পথে আহ্বান করতে চাই। আমি বা আমরা সৌভাগ্যবান যে লাউড সিনেমা, লাউড এক্সপ্রেশন, লাউড কনটেন্ট, বা পুওর সিনেমাটিক লজিকের বাইরে গিয়েও আমরা একটা বড় দর্শক শ্রেণী তৈরি করতে পেরেছি। আমি সবসময় নিজের গান নিজের সুরে গাইতে চেয়েছি, অন্যের সুরে নয়। কৃতজ্ঞ যে এটা করেই এতো এতো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, দোয়া পেয়েছি। আমি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সামান্য একজন ফিল্মমেকার, নায়কতো না। কি এমন হয়েছি যে রাস্তাঘাটে নামলে মানুষ জটলা পাকিয়ে ভালোবাসা জানায়! এখন দেখার বিষয় হলো এই ভালোবাসা বা আগ্রহকে শক্তি হিসাবে নিয়ে কি আমরা নতুন নতুন গল্প নতুন নতুন ঢংয়ে বলবো নাকি পুরনো সহজ রাস্তার পথিক হবো।’

২০১৭ সালের শুরুর দিকে ‘হলি বেকারি’ মাঠে গড়াবে। মূল চিত্রায়ন শুরু হবে মার্চের প্রথমদিকে। প্রযোজনা করবে ছবিয়াল। এছাড়া অন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে।

এদিকে সম্পাদনার টেবিলে রয়েছে ফারুকীর যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘ডুব’ (নো বেড অব রোজেস)। এছাড়া তার উচ্চাভিলাষী সিনেমা ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ রয়েছে নির্মাণের তালিকায়।


মন্তব্য করুন