Select Page

তবুও ভালোবাসি: দেখার পর তৃপ্তি নিয়ে ফেরা যায়

তবুও ভালোবাসি: দেখার পর তৃপ্তি নিয়ে ফেরা যায়

3***স্পয়লার অ্যালার্ট – ছবির কাহিনী সম্পর্কে ধারনা পেতে না হলে  ‘যা ভালো লাগেনি’ অংশ থেকে পড়ুন***

গাজীপুরে বন্ধুর বাড়ি আসার পর প্রথম অভিজ্ঞতাটা মোটেও ভাল হয়নি সংগ্রামের। অতিথি কে চোর বলে পেটালে অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর হওয়ার কথা নয়। সব এই দস্যি মেয়ে সুনয়নার জন্য হয়েছে। সুনয়না তো নয় আসলে কুনয়না হবে। একের পর এক অঘটন ঘটিয়েই চলেছে। এমন দস্যি মেয়ে বাপের জনমেও দেখেনি সংগ্রাম। উফ চোর সাজিয়ে কি মার টাই না খাওয়ালো সবার কাছে। সিনেমা হলে গিয়েও মেয়েটা গ্যাঞ্জাম পাকালো। সিনেমা হলের দর্শকদের ভিতর মারামারি বাধিয়ে দিয়েছে। উল্টো সংগ্রাম কে হুমকি দিয়ে রেখেছে এই কথা বাড়িতে জানালে তারও ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবে।

সিগারেটের নেশায় সংগ্রামের মাথা ঠিক নেই। কিন্তু তার বন্ধুর বাড়িতে অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আছে। তাই এখানে সিগারেট খাওয়া নিষেধ। বন্ধুর কথা মত সংগ্রাম বাড়ির পাশে তালতলায় চলে যায় সিগারেট টানতে। কিন্তু তালতলায় এসেই সংগ্রামের চোখ ছানাবড়া।
-তুমি সিগারেট খাচ্ছো!?
*খাচ্ছি না । পা—-ন করছি।
সংগ্রামের মুখে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে কথাগুলো বলে সুনয়না। একটা গ্রামের মেয়ে যে এভাবে সিগারেট টানছে তা বিশ্বাস হচ্ছে না সংগ্রামের। কিন্তু হঠাতই সুনয়নার বাবা চলে আসায় সংগ্রামের হাতে সিগারেট টা ধরিয়ে পালিয়ে যায় সুনয়না। এ সাক্ষাত ফুলনদেবী যেন সংগ্রাম কে বিপদে ফেলানোর জন্যই এর জন্ম হয়েছে।

দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটা দিন কেটে যায়। সংগ্রামের বন্ধুরও বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু দস্যি মেয়েটার পাগলামী কমে না । আজ সারা বাড়ি পোস্টারিং করেছে “সুনয়না লাভ (প্রতীক) সংগ্রাম”  কি সাংঘাতিক ব্যপার! পোস্টার ছিড়তে ছিড়তে সুনয়নার বাবার সামনে পড়ে যায় সংগ্রাম ।
-তোমার হাতে ওগুলো কিসের কাগজ ?
*জ্বী জ্বী মানে … বাচ্চাদের গণতন্ত্র চর্চা করাচ্ছি ।
ইতস্তত ভাবে জবাব দেয় সংগ্রাম ।
এদিকে হঠাতই সংগ্রামের মায়ের ফোন আসে । সংগ্রামকে এখনি ময়মনসিংহ যেতে হবে । উল্লেখ্য সংগ্রামের মা ময়মনসিংহের পৌরসভার চেয়ারম্যান ।

সংগ্রাম সবার কাছ থেকে বিদায় নেয় । এদিকে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায় সুনয়না । সে এখনো জানেইনা সংগ্রাম তাকে ভালবাসে কিনা । কিন্তু সংগ্রামের আর ময়মনসিংহ যাওয়া হয়না । এলাকার ত্রাস লাল ভাই অনির্দিষ্ট কালের জন্য এলাকায় হরতাল ডাকে । কোন গাড়িই এলাকা থেকে বেরুতে পারবে না । তাই আবার ফিরে আসে সংগ্রাম । এবার সুনয়নার কান্না অটোমেটিক খুশিতে কনভার্ট হয়ে যায় ।

সুনয়নার চুড়ি ভরা হাত ধরে টান দেয়ার ফলে সুনয়নার হাত কেটে রক্ত ঝরছে । সংগ্রামের এটা করা মোটেও ঠিক হয়নি । অযথা হাত টা কেটে গেল, তাই সংগ্রাম নিজেও নিজের হাত কেটে ফেলে । সুনয়না নিজের রক্তের সাথে সংগ্রামের রক্ত মিশিয়ে দেয় । লাল রক্তের সাথে লাল রক্ত । মনের সাথে মন ।

4

পুরো সিনেমায় অমিত হাসানের অভিনয় দর্শকদের প্রচুর বিনোদন দিয়েছে ।

লাল ভাই সুনয়নার বাবাকে হুমকি দিয়েছে । পত্রিকা অফিস বরাবর লালের বিরুদ্ধে লেখা চিঠিটা লালের হাতেই পৌছে যায় । লালের হুমকিতে অসুস্থ হয়ে যায় সুনয়নার বাবা । কিন্তু ওষুধ না থাকায় বিপত্তি ঘটে । এদিকে হরতালের কারনে সব দোকান পাট বন্ধ থাকে । ওষুধ আনার দায়িত্ব সংগ্রাম নিজের কাধে তুলে নেয় । হরতাল না মেনে ফার্মেসী থেকে ওষুধ নেয়ার কারনে লাল আর লাল বাহিনীর সাথে সংগ্রামের ফাইট হয় । লাল কে মেরে সংগ্রাম অর্ধ উলঙ্গ করে দেয় । এই মারামারির দৃশ্য কেউ একজন ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় । লাল সংগ্রামের উপর প্রতিশোধ নিতে পারে বলে সুনয়নার পরিবার সংগ্রাম কে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেয় ।

সুনয়না কে রক্তাক্ত অবস্থায় ময়মনসিংহের রাস্তায় পাওয়া যায় । অবেশেষে সংগ্রামের মা তাকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেয় । সংগ্রাম যখন ডাইনিং এ যায় তখন সুনয়না কে দেখে চমকে ওঠে । ও কিভাবে তার বাড়িতে ? কিন্তু সুনয়নার চোখের ভাষা তাকে ভয় পাইয়ে দেয় । সেই রাতেই সুনয়না বটি নিয়ে সংগ্রাম কে আক্রমন করতে যায় । সংগ্রাম কিছুই বুঝতে পারেনা । শুধু নিজেকে সুনয়নার কাছ থেকে রক্ষা করে চলে । এক পর্যায়ে সুনয়না কে সে শান্ত করে ।

সংগ্রামের উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য লাল সুনয়নার পরিবারের সবাইকে হত্যা করে । সংগ্রামের কারনে তার পরিবার শেষ হয়ে যাওয়ায় সে সংগ্রামের উপর প্রতিশোধ নিতে আসে ।

সংগ্রামের বাড়িতে লাল বাহিনী আক্রমন করে । কিন্তু এ যাত্রায় সংগ্রামের প্যাদানি আর গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে লাল পালিয়ে যায় । রাতের আধারে গ্রামের বেশ কয়েকটা বাচ্চা কে লাল তুলে নিয়ে যায় । বাচ্চার বিনিময়ে দাবি করে সংগ্রাম কে । সংগ্রামের মা শিশু বাচ্চাদের কথা ভেবে নিজের ছেলেকে লালের হাতে তুলে দেয় । লাল সংগ্রামের মা, বোন আর সুনয়নার গলায় অস্ত্র ধরে সংগ্রাম কে পেটাতে থাকে আর তা ক্যামেরাম্যান দিয়ে ভিডিও করে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংগ্রামেরই জয় হয় ।

সংগ্রাম চরিত্রে অভিনয় করে বাপ্পী আর সুনয়না চরিত্রে মাহী

যা ভালো লাগেনি:

আমার দৃষ্টিতে সিনেমার নামকরন অনুযায়ী পুরো সিনেমায় রোমান্টিকতার অভাব ছিল । নায়ক নায়িকার প্রেম কিভাবে হয় এবং কেন হয় তা দর্শক ভালভাবে ধরতে পারেনি । এটা কাহিনীকার ও পরিচালকের ব্যর্থতা বলব। এক দৃশ্যে ডাবিংএর কিছু ত্রুটি চোখে পড়ে । কথা শোনা যাচ্ছিল অথচ সোহেল রানার (সুনয়নার বাবা) মুখ নড়ছিল না । সম্ভবত মুখ নড়ছিল না । সম্ভবত মুখ বুজে কথা বলছিলেন । মাহীর হাত ধরে টান দেওয়ার সময় চুড়ি ভেঙ্গে মাহীর হাত কেটে গিয়েছিল । বাপ্পীও ইচ্ছা করে হাত কাটে । অনেক রক্ত পড়েছিল, কিন্তু ঠিক কি ধরনের চিকিতসা নিয়ে এক রাতের মাঝে হাত কাটার সমস্ত চিহ্ন হারিয়ে গেল তা জানার ইচ্ছা ছিল । অমিত হাসান (লাল) যখন ফোনে সোহেল রানাকে হুমকি দেয় তখন ছিল রাত । অথচ সোহেল রানার ওখানে ছিল দিন । গাজীপুরের দুইটা এলাকা পৃথিবীর দুই প্রান্তে চলে গেল কিনা তা ছিল ভাববার বিষয়।

হরতালের মাঝে ওষুধ আনতে গিয়ে বাপ্পী ফার্মেসী তে ঢুকল কিভাবে আর ঢুকেছেই যেহেতু তবে সাটার কেটে বের হওয়া লাগলো কেন তা বোধগম্য নয় । বাপ্পীর মা কে ভিলেন রা মারার জন্য প্রথমে ভ্যানে বেধে ফেলে এবং একজন ভ্যানের উপর উঠে অস্ত্র নিয়ে শাসাতে থাকে । পেছনে পেছনে আসতে থাকে ভিলেন দের ট্রাক ও মোটর বাইক বহর । বুঝলাম না, যদি মারারই ইচ্ছা থাকে তবে ভ্যানে বেধে এতোকিছু করার কি দরকার । এবার বাপ্পী উড়ে এসে ভ্যান এর নিয়ন্ত্রন নেয় এবং দ্রুত চালিয়ে সামনে থাকা ট্রাককে ধরে ফেলে (!) সেই ট্রাকে ছিল গাছের গুড়ি। একেক টা গুড়ির আঘাতে ভিলেন দের ট্রাক বিস্ফোরিত হতে থাকে . মনে হয় গাছের গুড়িতে বোমা ছিল (!) বাপ্পী যখন ভ্যান থেকে পড়ে যায় তখন গতিজড়তার কারনে ভ্যান টিকে সামনের দিকে যাওয়ার কথা । কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞান কে ভুল প্রমান করার জন্য ভ্যান টি পেছনের দিকে যেতে থাকে এবং মোড় নিয়ে বাধের ঢালু পথে নেমে যায় । কিন্তু সামনের চাকার পেছনের দিক একটি পাথরের সাথে আটকে যায় আর তাতেই ভ্যান টা থেমে যায় (!) সব অপদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র । অবশেষে বাপ্পী একটি দড়ি (দড়ি পেল কোথায়?) ছুড়ে মেরে ভ্যান টিকে তুলে আনে (!!!)

কোরিওগ্রাফি ভাল হয়নি ।

সিনেমায় দুই শিশু শিল্পীকে আরো ভালোভাবে ব্যবহার করা যেত । তাদের মৃত্যু না ঘটালেও হত ।
শেষ দৃশ্যে বাপ্পী যখন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে তখন তাকে হাসপাতালে নেয়ার বদলে দিতির (বাপ্পীর মা) জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দেয়া মোটেও যুক্তিযুক্ত ছিল না । পৌরসভার চেয়ারম্যান তো তাই সব জায়গায় ভাষন ।

যা ভালো লেগেছে :

পুরো সিনেমায় অমিত হাসানের অভিনয় দর্শকদের প্রচুর বিনোদন দিয়েছে । অমিত হাসানের অর্ধ উলঙ্গ হওয়ার পরের অভিব্যক্তি দারুন ছিল । শেষ দৃশ্যে অমিত হাসানের “পাতা খামু পাতা খামু, আমারে ছাগল পাইছে” এই বলে গাছের পাতা ছিড়ে ফেলার দৃশ্যটা ফাটাফাটি । মাহীর সিগারেট টানার দৃশ্য এবং এর পরবর্তী দৃশ্য উপভোগ্য ছিল । গান গুলোর চিত্রায়ন ভাল ছিল বিশেষ করে “তুমি আছো নজরে নজরে” গানটার চিত্রায়ন আসলেই অনেক ভাল হয়েছে । মাহীকে এই গানে কালো পোষাকে খুব সুন্দর লাগছিল বলা যায় মাহীর এযাবতকালের সেরা লুক । ব্যাকগ্রাউন্ড দর্শকদের ব্যবহার টাও কিছুটা ভাল ভাবেই হয়েছে । অন্যান্য সিনেমায় এই উতসুক জনতা কে স্ক্রিনে দেখানো খুবই দৃষ্টিকটু লাগত ।

সর্বোপরি কিছু ভুল ত্রুটি থাকলেও সিনেমাটা দেখা যায় । ভুল ত্রুটি অন্যান্য সিনেমার তুলনায় কম তাই সিনেমাটা দেখা উচিত ।


১ টি মন্তব্য

  1. বেকার যুবক

    – ঔষধের দোকান থেকে বেরোনোর জন্য নায়ককে সাটার কাটতে হল, কারণ সে যদি সাটার না কেটে চাবি দিয়ে তালা খুলতে যেত, কিংবা নিচ থেকে টান দিয়ে খুলত, তবে লালের সামনে তার নায়কগিরি প্রশ্নের সম্মুক্ষীন হত। লাল তাকে এক লাত্থি সদৃশ কিক করে গোরস্থানে পাঠিয়ে দিত। রণাংগণে এমন শক্তি প্রদর্শনের প্রয়োজন আছে।
    – ট্রাকটা পাশের রাস্তা থেকে এসেছে, আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
    – হ্যাঁ বিস্ফোরণের কোরিওগ্রাফি আরেকটু ভালো হওয়ার দরকার ছিল। সিনেমাটিক করার জন্যই এই বিস্ফোরণ। তবে ভিলেনরা ট্রাক সম্ভবত ব্যবহার করেনি, তাই তাদের ট্রাক ধ্বংস হওয়ার প্রশ্ন আসে না। তাদের ছিলো কয়েকটা মাইক্রো, আর মটরসাইকেল।
    – গতি জড়তার কারণে ভ্যানটা ঠিকই সামনে যাচ্ছিল, কিন্তু আপনি হয়তো খেয়াল করেননি গাছের গুড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুসারে ভ্যানটা পিছনের দিকে চলতে থাকে। পাথরের টুকরার সাথে বেকায়দায় ভ্যানটা আটকে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
    – ওরা অনেক দড়ি নিয়ে এসেছিল, এক টুকরা দড়ি গাড়ির চাকার কাছে পড়ে ছিলো, খেয়াল করেন নি বোধহয়।
    – এতে আয়োজন করে না মারার চেষ্টা করলে, এটা সিনেমাটিক হতো না, শুধু একটা গুলি করে দিলে তো ভীষণ রকম কমন হয়ে যেত।
    – লাল ভীষণ দুষ্ট। শিশু থেকে বৃদ্ধ কোন কিছুই তার হাত থেকে রেহাই পায় না। অতএব তাদের মৃত্যু না ঘটালে চলত না।
    – নায়ককে তো হাসপাতালে নেয়া হবেই, কিন্তু মায়ের হৃদয়ানুভূতি প্রকাশ করার প্রয়োজন ছিলো। অবশ্য আরেকটু স্পষ্ট বক্তব্য থাকলে ভালো হত।
    সেলিম রেজা আপনার লেখায় যেটুকু অসংগতি মনে হয়েছে, তাই এখানে আলোকপাত করলাম। ধরে নিতে হবে আপনার লেখার বাকি অংশ সংগতিপূর্ণ হয়েছে, অথবা সেব্যপারে আমার কোন মন্তব্য নেই। ধন্যবাদ।

    অনেক দেরীতে লিখলাম। সময় পাচ্ছিলামনা।

মন্তব্য করুন