Select Page

বাংলা চলচ্চিত্রের উত্থানে ‘রূপবান’

বাংলা চলচ্চিত্রের উত্থানে ‘রূপবান’
1
ষাট এর দশকে বাংলাদেশে আব্দুল জাব্বারে পদাঙ্ক অনুসরন করে অনেক নির্মাতা বাংলা চলচ্চিত্র নির্মানে এগিয়ে আসেন। পরিচ্ছন্ন ও সমাজ সচেতনমুলক সিনেমা ‘এদেশ তোমার আমার’, ‘ধারাপাত’, ‘যে নদী মরু পথে’, ‘রাজধানীর বুকে, ‘হারানো দিন’ ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘সুতরাং’, ‘নদী ও নারী’ প্রশংসিত হলেও তা বানিজ্যিক ভাবে লাভবান হতে পারছিল না।

বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আশায় সারা পাকিস্তানের বাজার ধরার আশায় ঢাকাতেই নাচে-গানে ভরপুর উর্দু সিনেমা বানানোর উদ্যোগ নেন। ঢাকাতে উর্দু ভাষায় সিনেমা নির্মানে এগিয়ে আসেন এহতেশাম, মুস্তাফিজ, ফজলে দোসানী, আনিস দোসানী প্রমুখ। এরই ধারাবহিকতায় তৈরী হয় ঢাকাইয়া উর্দু সিনেমা – চান্দা, তালাশ, মালা, সংগম, তানহা, বাহানা, চকোরী ইত্যাদি। উর্দু সিনেমার দোর্দন্ড প্রতাপে বাংলা সিনেমা পতিত হয় এক চরম সংকটে। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে ঢাকাতে ১৪ টি বাংলা সিনেমার বিপরীতে তৈরী হয় ১৮ টি উর্দু সিনেমা।

বাংলা চলচ্চিত্রের সেই দুর্দিনে কান্ডারী হিসেবে আবির্ভুত হন পরিচালক ও প্রযোজক সালাহউদ্দিন। ১৯৬৫ সালে তিনি তৈরী করেন প্রথম লোককাহিনী ভিত্তিক সিনেমা ‘রূপবান’। সালাহউদ্দিন এই সিনেমার নির্মাতা হলেও এর মুল কারিগর ছিলেন সিনেমাকর্মী সফদর আলী ভুঁইয়া ও তার ভাই সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়া। তাদের দীর্ঘদিনের উৎসাহ উদ্দিপনায় সালাহউদ্দিন ‘রূপবান’ সিনেমা বানান।

রূপবান’ সিনেমা মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে তৈরী হয় এক বিস্ময়কর কাহিনী। সেই সময়ের বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে ব্যাপক জনপ্রিয় লোক কাহিনী ভিত্তিক যাত্রা ‘রূপবান’ সিনেমার পর্দায় আবির্ভুত হওয়ায় গ্রামীণ জনগন তাদের চিরচেনা কাহিনী দেখতে পেতে দারুনভাবে তা লুফে নেয়। ঢাকা, সিলেট, সাভার ও মধুপুরে চিত্রায়িত ‘রূপবান’ সিনেমা সমালোচকদের কাছে বাহবা না পেলেও ব্যাপক দর্শকনন্দিত হয়েছিল। কুষ্টিয়ার মেয়ে তন্দ্রা মজুমদার এই সিনেমার মাধ্যমে সুজাতা নামে আত্মপ্রকাশ করে ‘রূপবান’ নাম ভুমিকায় অভিনয় করেন। রূপবান এ অভিনয় করে নায়িকা সুজাতা রাতারাতি খ্যাতির শীর্ষে উঠেন এবং রূপবান কন্যা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সত্য সাহা’র সংঙ্গীতায়নে আব্দুল আলীম ও নীনা হামিদের দরদী কন্ঠে গাওয়া ‘রূপবান’ সিনেমার গান মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে। ফলে ‘রূপবান’ হয়ে উঠে বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সর্বপ্রথম ‘সুপার হিট’ সিনেমা। উর্দু সিনেমার দাপটকে থমকে দেয়া ‘রূপবান’ এর দর্শকপ্রিয়তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক চিত্রপরিচালকই লোক কাহিনীর সিনেমা তৈরী শুরু করেন। একে একে তৈরী হয় মধুমালা, গুনাই বিবি, মহুয়া, কাঞ্চনমালা, সাত ভাই চম্পা, বেহুলা, আলোমতি, অরুন বরুন কিরন মালা, রাখাল বন্ধু ইত্যাদি।

এক নজরে ‘রূপবান
——————
অভিনয়ঃ সুজাতা, মনসুর, চন্দনা, সিরাজুল ইসলাম, ইনাম আহাম্মদ, আনোয়ার হোসেন, সৃভাষ দত্ত ও অন্যান্য।
চিত্রগ্রাহকঃ আব্দুস সামাদ।
সম্পাদকঃ বশীর হোসেন।
কন্ঠশিল্পীঃ নীনা হামিদ, আব্দুল আলীম, ইসমত আরা, কুসুম হক, নজমুল হোসেন।
সঙ্গীত পরিচালকঃ সত্য সাহা।
চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও প্রযোজনাঃ সালাহউদ্দিন।
মুক্তির তারিখঃ ৫ নভেম্বর,১৯৬৫ ইং ।

পরিশিষ্টঃ ‘রূপবান’ সিনেমার শিল্পমান নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও বাংলা চলচ্চিত্রের উত্থানকে বেগবান করতে এর ভুমিকা অনস্বীকার্য। সেইযুগে ‘রূপবান’কে যেমন ত্রাতা হিসেবে পেয়েছি, আজও হয়তো সিনেমা হল বিমুখ গ্রামীন জনগনকে হলমুখী করতে ত্রাতা হিসেবে প্রয়োজন আরেকটি ‘রূপবান’।

দেওয়ান মাহবুবুল আলম
৪ ডিসেম্বর, ২০১৩ ইং।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

দেওয়ান মাহবুবুল আলম

প্রচন্ড স্বপ্নবাজ মানুষ আমি। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। সারাক্ষন আমার মাথায় কোন না কোন সিনেমার প্লট বা গানের কথা ঘুরঘুর করে। সিনেমার প্রতি অসম্ভব ভালবাসা তৈরী হওয়ার জন্য আমার মায়ের কাছে কৃতজ্ঞ। স্কুলে যাওয়ার অনেক আগে থেকে শ্যামলী সিনেমাহল (ঢাকা) ছিল আমার এবং মায়ের প্রিয় জায়গা। বাবার ইচ্ছায় উচ্চশিক্ষার জন্য মাদ্রাজ (ইন্ডিয়া) গমন করি। সেখানে সাধারন মানুষের সিনেমা দেখার রেওয়াজ আমাকে আরো তাঁতিয়ে তোলে। শুরু হয় কিভাবে সিনেমা বানানো যায়, তার ধান্দা। পর্যায়ক্রমে শেষ করি ফিল্ম ও মিডিয়া সংক্রান্ত কয়েকটি কোর্স। এই ফাঁকে কয়েকবছর চাকরী করেছি একটি প্রোডাকশন হাউজে। বর্তমানে চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ করছি। নিজের পরিচালনায় কমেডি ফিল্ম ইয়ার্কি বানানোর জন্য প্রযোজক খোঁজ করছি। আর স্বপ্ন দেখি একদিন আন্তর্জাতিক মানের বাংলা সিনেমা বানাব !

মন্তব্য করুন