Select Page

ধ্যাততেরিকিঃ পটিয়েও পটাতে পারল না

ধ্যাততেরিকিঃ পটিয়েও পটাতে পারল না

জজ মির্জা (রজতাভ দত্ত) কৃপণ প্রকৃতির মানুষ। তার পিতা (রহমত আলী) মারা যাওয়ার আগে তাকে তার কিপটেমি কমাতে বলে যান এবং তার পারিবারিক গুপ্ত সম্পত্তির কথা বলেন যা বাড়ির উঠানে পোঁতা আছে। কিন্তু খুঁড়াখুঁড়ি করে নয় তা তুলতে প্রয়োজন একটি মন্ত্র বা পাসওয়ার্ড। জজ সাহেবের বাবা সেই পাসওয়ার্ড বলার মুহূর্তে হাঁচি আসায় তিনি পাসওয়ার্ড বলায় বাধাপ্রাপ্ত হন এবং মারা যাওয়ার পূর্বে পাসওয়ার্ডটি বললেও হাঁচির কারনে জজ সাহেব তা বুঝতে পারেন না। এবার শুরু হয় জজ সাহেবের পাসওয়ার্ড খোঁজার পালা। “আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে” থেকে শুরু করে “পাসওয়ার্ড অমনিবাস” কোন কিছুই বাদ রাখেননি তিনি।

অপরদিকে তার ছেলে রাজ (আরিফিন শুভ) বিদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়ে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এখন একজন ডিজে। সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর গানে মেতে থাকে। তার বন্ধু সালমান (রোশান) সিনেমা পাগল। সে কখনো “দাবাং”-এর সালমান খানের অনুকরণ করে হয় “বুলবুল পান্ডে”, কখনো “আম্মাজান”-এর মান্না, কখনো “মুন্না ভাই এমবিবিএস”-এর সঞ্জয় দত্ত, কখনো “দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে”-এর শাহরুখ খানের রাজ চরিত্রের মত বাস থেকে হাত বাড়িয়ে দেয় তার নায়িকার বাসে তুলতে, কখনো “ওয়ান্টেড”-এর রাধে, আবার কখনো “হিরো: দ্য সুপারস্টার”-এর শাকিব খান।

যাই হোক, রাজ তার ফুফাত বোনের বিয়েতে গিয়ে শান্তির (নুসরাত ফারিয়া) প্রেমে পড়ে এবং তাকে বিয়ে করে। অন্যদিকে সালমান বাসে পরিচিত হওয়া আরেক সিনেমা পাগল মাধুরীকে (ফারিন) রাজ পরিচয় দিয়ে প্রেম করে এবং তাকে রাজের বাড়িতে নিয়ে তুলে। এবার শুরু হয় আসল রাজ আর নকল রাজ নিয়ে জটিলতা।

ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য বিভিন্ন বলিউডি ও হলিউডি ছবি থেকে অনুপ্রাণিত বা নকলও বলা চলে। এবং যথারীতি সেই কাহিনীকার ও চিত্রনাট্যকার আর কেউ নয়, সবার প্রিয় জহির বাবু ভাই। ছবির একটি অংশে দেখা যায় রাজ পোষা কুকুর শাহেনশাহকে ইলেক্ট্রিক শক দিচ্ছে যা হলিউডি ক্যামেরন দিয়াজ-বেন স্টিলার-ম্যাট ডিলন অভিনীত “দেয়ার্‌স সামথিং অ্যাবাউট ম্যারি”-এ ডিলনের চরিত্র বা বলিউডি অক্ষয় কুমার-শহীদ কাপুর-রিমি সেন অভিনীত “দিওয়ানে হুয়ে পাগল”-এ অক্ষয়ের চরিত্রের অংশবিশেষ থেকে নেওয়া। আবার আসল রাজ নকল রাজ বিষয়ক জটিলতাও অক্ষয়ের “হাউজফুল”-এর সাথে মিল পাওয়া যায়।

একাধিক অভিনয়শিল্পী থাকলেও আরিফিন শুভকে কেন্দ্র করে ছবির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। তবে আরিফিন শুভ কিছু স্থানে সংলাপ বলার সময় তার পূর্ববর্তী ছবি “কিস্তিমাত”-এর মত আনাড়িভাবে চিৎকার করেছে, যা কানে লাগে। এছাড়া বাকি অংশে তার অভিনয় ভালো লাগার মত। শুভর মত রোশানও চিৎকার না করলেও সে একটু বেশি লাফালাফি করেছে, যা দৃষ্টিকটু। তবে সিনেমা পাগল হিসেবে বিভিন্ন রূপে তাকে দারুণ মানিয়েছে, বিশেষ করে “ওয়ান্টেড”-এর রাধে হিসেবে তার এন্ট্রি। নুসরাত ফারিয়া আগের চেয়ে অনেক ভালো করেছে এবং তার ভালো করার চেষ্টা রয়েছে তা বুঝা যাচ্ছে। তার ক্লাসিক্যাল নাচের অংশটা ভালো লেগেছে। ছবির কাহিনী অনুযায়ী ফারিনের ন্যাকামিটা ঠিক আছে তবে ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে হলে আরও ভালো করতে হবে।

তবে অভিনয় দিয়ে মাতিয়ে দিয়েছেন রজতাভ দত্ত (রনি দা) এবং শুভাশিষ। কৃপণ জজের ভূমিকায় রনি দা অসাধারণ অভিনয় করেছেন। সন্ত্রাসী ঠ্যারা সাদ্দাম চরিত্রে শুভাশিষ এ ধরনের কমেডি চরিত্রে যেমন ভিলেন প্রয়োজন তেমনি ছিল। এ ধরনের ভিলেন চরিত্রে বলিউডে শক্তি কাপুরকে প্রায়ই দেখা যেত একসময়। বাকি পার্শ্ব চরিত্রগুলোর মধ্যে বিশ্বনাথ ছাড়া বাকিরা খুবই আনাড়ি ও অতি-অভিনয় করেছে, এমনকি প্রবীণ অভিনেতা সাদেক বাচ্চুও।

চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনা ভালো ছিল। ইমন সাহার মৌলিক আবহ সঙ্গীত ভালো লাগলেও যেসব অংশে অন্য ছবির অংশ নেওয়া হয়েছে এবং সেই ছবির আবহ সঙ্গীত ব্যবহার করা হয়েছে তার সাথে মৌলিকের সামঞ্জস্য রাখতে পারে নি। গানের ক্ষেত্রে নদীর কণ্ঠে নজরুলগীতি “মোর ঘুম ঘোরে এলে” গানটি শ্রুতিমধুর লেগেছে। পাশাপাশি নৃত্য পরিচালনায় ক্লাসিক্যাল ধাঁচ নিয়ে আসার প্রয়াস ছিল। ছবির নাম নিয়ে তৈরি “রঙ্গিলা রঙ্গিলা” গানের ধারনাটি চমকপ্রদ, যা দুই সিনেমা পাগল চরিত্রকে সঠিকভাবে বর্ণনা করেছে। ছবিতে দেখা যায় ডিজে পার্টিতে হিন্দি “লুঙ্গি ড্যান্স” বাজানো হচ্ছে। আমাদের সিনেমায় “রঙ্গিলা রঙ্গিলা”র মত কিছু গান আসলে আমাদের আর ডিজে পার্টিতে হিন্দি গান বাজাতে হবে না।

পরিচালক শামীম আহমেদ রনীর এটি তৃতীয় কাজ। এর আগে তিনি “রানা পাগলা দ্য মেন্টাল” ও “বসগিরি” পরিচালনা করেছেন। ধ্যাততেরিকি আগের দুইটা থেকে ভালো কিন্তু কমেডি ছবি হিসেবে ততটা ভালো না। পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজের একটি হল লোক হাসানো। কিন্তু সারাক্ষণ সুরসুরি দিলে লোক এক সময় আর হাসবে না। তারা বিরক্ত হবেই। এই ছবির দশাই তাই হয়েছে।

“বাদশা দ্য ডন” সিনেমায় একটা গান ছিল ধ্যাততেরিকি পটেও পটে না, এই ছবিও তাই। পর্যাপ্ত ফান কনটেন্ট থাকার পরও ছবিটি দর্শকদের পটিয়েও পটাতে পারলো না। “রঙ্গিলা রঙ্গিলা” গানে যেমন সব বাংলা ছবিকে নিয়ে করা হয়েছে, রোশানের সবগুলো সিনেমেটিক চরিত্র বাংলা সিনেমার হলে ভালো হত। মোটের উপর, রোমান্স কমেডি নির্মানের প্রচেষ্টাটা ভালো লেগেছে।

আমার রেটিং: ২/৫।


মন্তব্য করুন