← অনুক্রোশ

মন্তব্য করুন।

৫টি রিভিউ

  1. ছবিটি গতানুগতিকতার বাইরে একটি সুন্দর ছবি। পোস্টার দৃষ্টিনন্দন । আবহ সঙ্গীতে বৈচিত্র্য থাকলে ভাল লাগতো । গল্প বলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলা কুশলীদের অভিনয় পরিমিত ও ভাল। বর্তমান সময়ের দর্শকদের ছবিটি নতুন কিছুর অভিজ্ঞতা দেবে ।

  2. ‘অনুক্রোশ’ : বাঙালিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের দার্শনিক সিনেমা
    আবদুল্লাহ আল মোহন

    বেশ অনেকদিন পর হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হলো আজ।সিনেমা আমি নিয়মিতই দেখি, সে বাসায় কম্পিউটারে, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে, ছায়ানটে কিংবা সিনেমা উৎসবে গিয়ে। ঢাকার হলে গিয়ে সিনেমা দেখার আগ্রহ, ইচ্ছা খুব কমই হয়। ফেসবুকের কারনে ‘অনুক্রোশ’ সিনেমার প্রচার-প্রচারণা নজরে আসে। ফলে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলি এটি দেখতেই হবে।সুযোগ তৈরি করে আজ সাড়ে তিনটার শো দেখে ফেললাম বলাকা-২, সিনেমা হলে গিয়ে। না দেখলে আফসোসই থাকতো। সিনেমাটি দেখে, দেখা শেষ করে প্রায় চিরায়ত পর্যায়ের অজস্র প্রশ্নের লাটিম মনের মধ্যে ঘুরতে শুরু করেছে। এই ঘূর্ণন আবেশ কেখন যে কাটবে তা জানি না।
    আমার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ঘনিষ্ঠতম বন্ধুদের একজন জুয়েল (রিয়াজ মাহমুদ)। যে ‘অনুক্রোশ’ সিনেমার প্রধান বা কেন্দ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করেছে। আমার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আরেক বন্ধু আরিফও (ড. শেখ আরিফুজ্জামান) অভিনয় করেছে এই সিনেমায়।আর সবুজ ভাইয়ের কথা না বললেই নয়। অভিনেতা-লেখক-অনুবাদক-গায়ক সবুজ ভাই (খায়রুল আলম সবুজ) আমার প্রিয় মানুষদের একজন। এখনো প্রায়ই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আড্ডা হয় তাঁর সাথে। তুমুল তর্ক জমে কিন্ত তিনি কখনোই উত্তেজিত হন না।গানের গলাও তাঁর চমৎকার। এত প্রিয় মানুষের অভিনীত সিনেমাটি না দেখে কি পারা যায় ?
    কিন্তু ‘অনুক্রোশ’ সিনেমাটি দেখার সময় এরা যে আমার আপনজন তা একটি বারের জন্যও মনে হয়নি। কেন ? কারন তাঁদের অসাধারণ দক্ষ অভিনয় ক্ষমতার দাপট।অভিনীত চরিত্রের সাথে মিলেমিশে এতটাই একাকার হয়ে গিয়েছিলেন যেন আলাদা কোন পরিচয় আর ভাববার সময়ই পাইনি।এটাকে আমার শক্তি হিসেবেই মনে হযেছে। কারণ এমনটা বাংলা সিনেমায় দেখা যায় না বললেই চলে।নারীকে সচেতনভাবে ব্যবসার উদ্দেশ্যে যৌন উপাদান হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতা সর্বত্র লক্ষ্য করা যায়। ‘অনুক্রোশ’ সিনেমায় কোন নারী চরিত্র নেই বলে এর নান্দনিক মর্যাদা একটুও ক্ষুন্ন হয়নি। বার বার মনে পড়ছিল নারী চরিত্রবিহীন নোবেল বিজয়ী উপন্যাস হেমিংওয়ের ‘দ্য ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সি’র কথা।
    ‘অনুক্রোশ’ সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনা পরম্পরায় এসেছে দার্শনিক নানা প্রশ্ন এবং এর যৌক্তিক উত্তরও। সিনেমায় দর্শনকেই আমার কাছে প্রধান চরিত্র বলে মনে হয়েছে। চিরায়ত যাত্রাপালার বিবেক কিংবা প্রাচীন গ্রীসের ডেলফির মন্দিরে দৈব বাণীর মতো চরিত্র হয়ে উঠেছেন সবুজ ভাই তাঁর চরিত্রের চিত্রায়নে।তাঁর অভিনয়ের পূর্ণ শক্তি ও ক্ষমতার আলোকিত বিচ্ছুরণ দেখলাম আমরা।প্রতিটি চরিত্রই চাহিদা বা দাবি মেটানোর চেষ্টা করেছেন বলেই ‘সম্মিলিত শিল্প’ সিনেমাটি তত্ত্ব প্রধান হয়েও শুধু কাঠামোতে সীমাবদ্ধ থাকেনি, প্রাণের আবেগে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সিনেমা বিষয়ে আমার জানার পরিমান খুবই সামান্য। তারপরও বলতে সাহস হয়, আমার বিবেচনায় বিষয়বস্তুর গুণে প্রচলিত ধারণার কাঠামোর বাইরে গিয়ে নির্মাণ কৌশলে ‘অনুক্রোশ’ হয়ে ওঠে বাংলা সিনেমার নবজাগণের একটি স্ফুলিঙ্গ। চারুকলা,ছবির হাট হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধশিশু, বীরাঙ্গণা, মানবতার অপরাধীদের বিচার, বাঙালিত্ব, বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা, নাস্তিকতা, ধর্ম ও জাতীয়তার মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বিষয় হিসেবে ঘুরেফিরে এসেছে ‘অনুক্রোশ’ এ নানা চরিত্রের মাধ্যমে। তাই বলে জীবন দর্শনের বৃত্তের বাইরে গিয়েও ‘অনুক্রোশ’ কক্ষচ্যুত হয়নি মূল ফোকাস থেকে।স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের মধ্য দিয়ে আমাদের অস্তিত্বের সংকট ও মুক্তির ভিন্ন মাত্রাকে তুলে ধরার অকৃত্রিম চেষ্টা করা হয়েছে। একটিমাত্র গান আছে, অযথা আকর্ষণ সৃষ্টির জন্য সেখানে অতিরিক্ত মুন্সিয়ানার কোন অপচেষ্টা আমরা দেখিনা।পুরো সিনেমাটিতেই সুস্থ ও পরিচ্ছন্নতার চেষ্টা ছিল, কিন্তু দর্শন-চিন্তনের প্রতি আকর্ষণ ধরে রাখা কষ্টদায়ক বলে এর সাবলীলতা সিনেমাটির গতিশীলতা নষ্ট করেছে হয়ত মাঝে মাঝে।
    ‘অনুক্রোশ’ মানে ক্ষমা করা, দয়া করা। কিন্তু সেটা মোটেই দূর্বলতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। এটাও প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে। বক্তব্য প্রধান ‘অনুক্রোশ’ সিনেমার আলোর ব্যবহার সংযত, শব্দ সংযোজনেও পরিমিতি বোধের পরিচয় মেলে। দেশের বিতার্কিকদের জন্যও ‘অনুক্রোশ’ সিনেমাটি তাদের প্রাথমিক পাঠের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে অনায়াসে ব্যবহ্নত হতে পারে।
    ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজিত ‘অনুক্রোশ’ সিনেমা রচনা ও পরিচালনা করেছেন গোলাম মোস্তফা শিমুল। ব্যবসা-বাণিজ্যের এই যুগে লাভের প্রতি লোভী না হয়ে এমন একটি আদর্শিক সিনেমা উপহার দেবার জন্য তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
    মনে খুব কষ্ট পেয়েছি, ক্ষুব্ধ হয়েছি ‘অনুক্রোশ’ সিনেমার শুরুতে আমাদের জাতীয় সংগীত নামমাত্র প্রচারে এবং জাতীয় পতাকার বিবর্ণ উপস্থাপনা দেখে। বলাকা-২ হল মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে এদিকটায় বিশেষ নজর দেবেন বলেই আশাবাদি। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এবং দার্শনিক সিনেমা ‘অনুক্রোশ’ দেখে আমি খুবই মুগ্ধ, খুশি। তবে আমি ক্ষুব্ধ আমাদের দর্শকদের সংখ্যা এবং হলে তাদের মনোযোগের অভাব দেখে।চিন্তন জগতে অংশীদারিত্বের বাঙালির এই চরম দারিদ্র্য অবস্থা ঘুচবে কবে ?
    জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবার (২০১৪ সাল) থেকে স্নাতক কোর্স-এর পাঠক্রমে ‘বাংলাদেশ এবং বাঙালির ইতিহাস ও সংস্কৃতি’ তথা ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস- পরিধি ও পরিচিতি’ সকল বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে। এই কোর্সের সহায়ক পাঠ্যক্রম হিসেবে এই সিনেমা ‘অনুক্রোশ’ সংযুক্ত রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি। এই কোর্সের একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি এরকম সৃজনশীল সিনেমাকেও সহায়ক গ্রন্থের সাথে বাধ্যতামূলক করা হলে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ সহজ ও সফল হবে।
    সবাইকে ‘অনুক্রোশ’ সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। তা না দেখলে নতুন করে সত্যকে অনুসন্ধানের অনেক কিছুই আপনি মিস করবেন। আমি মোটেই স্বজনপ্রীতি বা বন্ধু্প্রীতি করছি না।আপনার নিজেকে জানার, চেনার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি কেবল। কারণ আমরা ‘আপনারে আপনি চিনিনে’। (অসমাপ্ত)

  3. “…..প্রচলিত শিল্পরীতি ভেঙ্গে নির্মিত চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্র নির্মাতার সংখ্যা এখন আর নেহায়েত কম নয়। এইসব চলচ্চিত্রগুলোর বেশির ভাগই সাধারন দর্শক ও বোদ্ধাদের চোখে “ব্যর্থ” হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। গোলাম মোস্তফা শিমুলের ‘অনুক্রোশ’ নিঃসন্দেহে তার ব্যতিক্রম। আজ বন্ধুদের নিয়ে গোগ্রাসে বীক্ষণ করলাম এই অপূর্ব চলচ্চিত্রটি। চলচ্চিত্রটির সমৃদ্ধ বিষয়বস্তু, দুর্বিনীত ভাষা, অনন্য নির্মাণ আঙ্গিক আমাকে বিমোহিত করেছে। এর রস আস্বাদনে অন্যতম যোগানদার ছিলেন চলচ্চিত্রটির গুণী অভিনেতাগণ।….”

    নাট্য নির্মাতা শিখর সানিয়াত

  4. অসাধারণ একটি ছবি! সকল অভিনেতার অভিনয়ই চমত্কার, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনেতা রিয়াজ মাহমুদ জুয়েলের অভিনয় দারূন। ছবিটি অবশ্যই জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার দাবি রাখে। এধরনের আরো ছবি হোক এই আশা করি.

রিভিউ লিখুন

আরও ছবি