Select Page

খোকনের সহকর্মীরা যা বললেন

খোকনের সহকর্মীরা যা বললেন

shohidul-islam-khokan4

দীর্ঘদিন ধরে মুখগহ্বরের মোটর নিউরো ডিজিসে (ক্যান্সার) ভুগছিলেন শহীদুল ইসলাম খোকন। ২০১৪ সালে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানকার ডাক্তাররা জানিয়ে দেন এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব নয়। এরপর ফিরিয়ে আনা হয় দেশে। ৪ এপ্রিল সকাল সোয়া ৮টার দিকে উত্তরার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। সমাহিত করা হয় উত্তরার একটি কবরস্থানে, অভিনেতা রাজিবের পাশে।

সেদিন সহকর্মীরা বলেন খোকন প্রসঙ্গে—

সোহেল রানা : খোকনের মৃত্যুর খবর শোনার পর আমার সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। কোথায় যাব, কী করব কিছুই ভাবতে পারছি না। কারণ চোখের সামনে ভেসে উঠছে কলেজ পড়ুয়া সেই যুবক ছেলেটির চেহারা। ওই বয়সে সে আমার কাছে এসেছিল। দশ বছর আমার সহকারী হিসেবে কাজ করেছিল জীবনের শেষ সময়ে এসে এতটা কষ্ট ভোগ করে তাকে মরতে হবে ভাবিনি কখনও। দোয়া করি আল্লাহ যেন খোকনকে বেহেস্ত নসিব করেন।

খোকন অনেক দিন ধরে অসুস্থ ছিল। জানতাম পরিণতি কী হতে চলেছে। তার পরও খোকনের মতো মেধাবীরা চলে গেলে খারাপ লাগে, মানতে কষ্ট হয়। আমি রুবেলকে যে চোখে দেখতাম, ভালোবাসতাম; খোকনকেও তা-ই। ওদের দুজনের ছবি হিট হলে সবচেয়ে খুশি হতাম আমি। খোকন আমাকে নিয়েও একের পর এক ছবি করেছে। ওর পরিচালনায় কাজ করতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম। মাঝে মাঝে গর্ব করতাম, এমন একটি মেধাবী আমার হাত ধরে এসেছে! পরিচালক হিসেবে খোকন কতটা সফল, তা চলচ্চিত্র ইতিহাসে লেখা থাকবে। খোকনকে নিয়ে আমি গর্বিত। আল্লাহ তাঁর আত্মার শান্তি দান করুন।

সুবর্ণা মুস্তাফা : খোকন ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা অনেক। তিনি বলতেন, পরিচালক যেদিন প্রযোজক কিংবা নায়ক-নায়িকাকে স্যার বলবেন, সেদিন বুঝতে হবে ইন্ডাস্ট্রি শেষ। হয়েছেও তা-ই। একমাত্র খোকন ভাই দেখিয়ে দিয়েছেন পরিচালকরা কত বড় তারকা হতে পারে! তিনি শুধু মসলাদার ছবিই তৈরি করেননি, অনেক এক্সপেরিমেন্টও করেছেন। বিশেষ করে ‘পালাবি কোথায়’ ছবির কথা না বললেই নয়। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পরই কিন্তু প্রতিটি গার্মেন্টে শিশুদের জন্য আলাদা রুম বরাদ্দ হয়েছে। খোকন ভাইয়ের অবদানের কথা বলে শেষ করা যায় না। তাঁর মতো গুণী পরিচালকরা যখন চলে যান, তখন বড় শূন্যতা বোধ করি।

রুবেল : খোকন চলে গেছে বিশ্বাস করতে পারছি না। ওর মতো মেধাবী পরিচালক আর দ্বিতীয় কাউকে পাব কি না সন্দেহ। খোকন নতুন একটি ধারা তৈরি করেছিল। চলচ্চিত্রে মার্শাল আর্টের প্রচলন শুরু হয় ওর হাত ধরে। আমাদের দুজনের রসায়নটা চমৎকার ছিল। একের পর এক হিট ছবি দিয়েছি। পরিচালক যে ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’ তা খোকনই প্রমাণ করেছে। দেশের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া পরিচালক ছিল সে। তার পরও কোনো অহংকার ছিল না। অসুস্থ হওয়ার পর আমি প্রায়ই যোগাযোগ করতাম। কথা হয়েছিল, সুস্থ হওয়ার পর আবার একসঙ্গে কাজ করব। কিন্তু তা আর হলো না। আল্লাহ খোকনকে বেহেশত নসিব করুন।

ইলিয়াস কাঞ্চন : একে একে চলচ্চিত্র শিল্পের মেধাবী মানুষদের হারাচ্ছি আমরা। খোকন ভাই ক্যামেরার পেছনে থেকেই আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তার নির্দেশনায় আমার সবচেয়ে আলোচিত ছবি হচ্ছে ‘কমান্ডার’। সকালে এ বন্ধুটির চলে যাওয়ার খবরে নির্বাক হয়ে যাই। এর চেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছিলাম যেদিন শুনেছিলাম তার আর চিকিৎসা নেই। বাকি দিন তাকে নির্বাক হয়েই চলে যেতে হবে। স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা যেখানেই রাখুন খোকন ভাই যেন ভালো থাকে।

আমিন খান : একজন মেধাবী চলচ্চিত্রকার বলতে যা বোঝায় তার সবই ছিল শহীদুল ইসলাম খোকন ভাইয়ের মাঝে। ক্যারিয়ারের শুরুতে এ মানুষটি অনেক তারকা শিল্পীকে টেনে উপরে তুলেছেন। আসলে ভালো মানুষ বেশিদিন থাকে না পৃথিবীতে। আমরা কী হারালাম তা এখন হয়তো অনেকেই বুঝবে না। কিন্তু কিছুদিন পরই খোকন ভাইয়ের বিয়োগ টের পাবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি। আল্লাহ যেন তাকে ভালো রাখেন।

পপি : সকালে ঘুম থেকে জেগেই এমন একজন গুণী মানুষের চলে যাওয়ার খবর শুনতে হবে কখনও কল্পনাও করিনি। একে একে আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি থেকে এমন মেধাবী মানুষদের অপ্রত্যাশিত চলে যাওয়াটা বেশ সংকটে ফেলবে শিল্পকে। ঢাকাইয়া ছবির প্রায় তারকা শিল্পীই খোকন ভাইয়ের হাত ধরে সামনে এসেছেন। তার শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে শান্তিতে রাখেন।

মৌসুমী : খোকন ভাই খুব বড় মাপের পরিচালক ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি ভালো মনের মানুষ ছিলেন। ভালো গুণের অধিকারী ছিলেন। সারাজীবন দেখেছি তিনি মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। মানুষকে ভালোবাসা দিতে কার্পণ্য করেননি। ভালোবাসা পেয়েছেনও। তার প্রতি কারও যদি কোনো দাবি থাকে, সেই দাবি ছেড়ে দেবেন প্লিজ। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। উনি চির শান্তিতে থাকতে পারেন সেই দোয়া করবেন সবাই।

পূর্ণিমা : দর্শকের কাছে রিতা থেকে পূর্ণিমা হওয়ার পেছনে শহীদুল ইসলাম খোকন ভাইয়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। তার নির্দেশনায় ‘যোদ্ধা’ ছবিতে অভিনয় করেই আমার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায়। একজন শিল্পীর কাছ থেকে কী করে অভিনয় বের করে নিয়ে আসতে হয় তার সবই খোকন ভাইয়ের দখলে ছিল। এমনিতেই আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প আধামরা অবস্থায় রয়েছে। চলচ্চিত্রের এই দুর্দিনে তার অনুপস্থিতিটা অনেক বেশি ভোগাবে আমাদের।

khokon-simla

সিমলা : চলচ্চিত্রে অনেকেই পরিবর্তিত নামে যাত্রা শুরু করেন। আমার জন্যও একটি নতুন নাম চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও খোকন ভাই আমার নামটি পরিবর্তন করেননি। তিনি আমাকে সিমলা নামেই সবার সামনে তুলে ধরেন। তাকে আমার কষ্টের কথাগুলো বলতে পারলাম না। কথাগুলো আর বলা হবে না কাউকে। খোকন ভাইকে আল্লাহ বেহেস্ত নসিব করুন। তিনি যেন ওই আকাশে গিয়ে আমাকে সিমলা নামেই ডাকেন।

রেসি : আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে খোকন ভাইয়ের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছিল। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম কতটা মেধাবী পরিচালক তিনি। প্রিয় এই মানুষটি অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করেছি দ্রুত যেন তিনি সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু সেটি আর হল না। উল্টো তার মৃত্যুর খবর শুনতে হল। তার চলে যাওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন অভিভাবক হারালাম। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

এটিএম শামসুজ্জামান : আমরা অল্প পয়সায় ভালো কিছু করতে চাই। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি খুবই গরীব। সেখানে সীমিত পরিসরে অনেক কিছু করে দেখিয়েছেন শহীদুল ইসলাম খোকন। সে কাজের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে বেঁচে থাকবেন। এটা আমি বিশ্বাস করি এবং জানি। আমি মনে করি না শহীদুল ইসলাম খোকন চলে গেলেন। দৈহিকভাবে আমাদের চোখের আড়াল হয়েছেন। কিন্তু কাজের ভেতর দিয়ে সবসময় তাকে কাছাকাছি পাবো। নতুন প্রজন্ম যারা আজকে লেখাপড়া শিখে চলচ্চিত্রে আসতে চাইছেন শহীদুল ইসলাম খোকন তাদের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকুক। তাদের কাছে আমার এটুকুই প্রত্যাশা।

ওমর সানি : আমার পরিবার সব সময় তার পাশে ছিলো। দুই বছর ধরে তিনি কষ্ট করেছেন। তিন মাস কোমায় ছিলেন। মৃত্যু অনেক সময় মুক্তি নিয়ে আসে। আমাদের খোকন ভাইয়ের মুক্তি মিলেছে। আমার বিশ্বাস তিনি যেখানেই যান না কেন ভালো থাকবেন। তার কোনো ছবিতে অভিনয় করা হয়নি। এটা এখন আফসোস হয়। তার মতো গুণী পরিচালক আর আসবেন না। স্টার কী জিনিস উনি দেখিয়েছেন। একজন ডিরেক্টর কীভাবে স্টার হয় উনি সেটা দেখিয়েছেন। উনি আমার বড় ভাই ছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শক তাকে চিরদিন মনে রাখবেন।

সংকলন সূত্র : কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, পরিবর্তন, বাংলানিউজ


মন্তব্য করুন