Select Page

স্মৃতিতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা

স্মৃতিতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। ১৭৫৭ সালে তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলার সূর্য অস্তমিত হয়। বাঙালির দুঃখগাথা এই সত্য ঘটনাকে উপজীব্য করে ১৯৬৭ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন খান আতাউর রহমান। এতে নবাবের ভূমিকায় আনোয়ার হোসেন এবং আলেয়ার চরিত্রে অভিনয় করেন আনোয়ারা। আজ ঐতিহাসিক পলাশী দিবস উপলক্ষে দুই অভিনয়শিল্পীর স্মৃতি নিয়ে বিশেষ আয়োজন করেছে বাংলা দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন।  তাদের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ। সেটি বিএমডিবি পাঠকদের জন্য জন্য হুবহু তুলে দেয়া হলো-

01.jpg_2350_1.01আনোয়ার হোসেন

সিরাজউদ্দৌলার মতো একটি কালজয়ী চরিত্রে অভিনয় করে তৃপ্ত হতে পারিনি। কারণ তাকে অনুকরণ করা দঃসাধ্য। এ চরিত্রে অভিনয় করতে রাজিই ছিলাম না। কিন্তু খান আতা ভাইয়ের পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলাম।

আমি জানি সিরাজউদ্দৌলা চরিত্রটি নিজের মধ্যে ধারণ করে ফুটিয়ে তোলা একবারেই অসাধ্য। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর এটি ব্যাপক সাফল্য পেল এবং আমাকে সবাই মুকুটহীন নবাব উপাধি দিল। এতে আমি বিব্রত হলাম। কারণ জানি আমি কিছুই করতে পারিনি। পর্দায় সিরাজউদ্দৌলা চরিত্রে নিজেকে দেখতে গিয়ে দেখলাম আমার অভিনয় ভুলে ভরা। যা আমাকে শুধুই দুঃখ দিয়েছে। তারপরেও চলচ্চিত্রটি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। এখনো মনে করি এ সাফল্যে আমার কোনো কৃতিত্ব নেই। তাছাড়া নবাব উপাধিতে আমি কখনো খুশি হতে পারিনি। কারণ দর্শকের ভালোবাসায় অভিনেতা আনোয়ার হেসেন হতে পেরেছি এতেই আমি তৃপ্ত।

02.jpg_2350_2.02আনোয়ারা

কখনো কল্পনাও করিনি আলেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আমার মতো ছোটখাটো একজন অভিনেত্রীকে খান আতা ভাই নির্বাচন করবেন। তার ওপর আনোয়ার হোসেন ভাইয়ের মতো একজন জাঁদরেল অভিনেতার সঙ্গে কাজ করব। এটা ছিল স্বপ্নের মত। প্রবল উৎসাহে মনপ্রাণ উজাড় করে কাজ করলাম। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর একবার এক মজার ঘটনা ঘটল। আমি কক্সবাজারে শুটিংয়ে গেলাম। হঠাৎ এক লোক এসে আমাকে বললেন আপনি এখনো অভিনয় করছেন? তার কথায় হতচকিত হয়ে গেলাম। জানতে চাইলাম এ ধরনের প্রশ্ন কেন। তিনি বললেন আপনার জন্য তো আলেয়া চরিত্রই যথেষ্ট। আর কোনো চরিত্রের প্রয়োজন নেই। তিনি দুটো অনুরোধ করলেন আমাকে। একটি হচ্ছে- আমি যেন আর কোনো চরিত্রে অভিনয় না করি এবং অন্যটি হলো বয়স ধরে রেখে আজীবন যেন আলেয়া হয়েই থাকি। তার কথায় গর্ববোধ করলাম। মনে হলো সত্যি আলেয়া হতে পেরেছি। বাস্তবের সাধারণ আনোয়ারা বুঝি পর্দায় অসাধারণ আলেয়া হয়ে গেছি। আজো নিজের কাছে নিজের অভিনীত আলেয়া চরিত্রটি শ্রেষ্ঠ চরিত্র হয়ে আছে।

আনোয়ার ভাই সম্পর্কে বলি, চলচ্চিত্রটিতে তার দক্ষ অভিনয় দেখে বুঝলাম সত্যিই তিনি নবাব। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর মঞ্চে প্রায় আটশতবার আনোয়ার হেসেনের সঙ্গে আলেয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছি। প্রতিবারই নতুনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতেন তিনি।

একবার এক চলচ্চিত্রের কাজে আমি, আনোয়ার ভাই ও মুস্তাফা ভাই আউটডোরে গেলাম। এক লোক এসে আমাকে আর মুস্তাফা ভাইকে হাতে সালাম দিলেন আর আনোয়ার ভাইকে পায়ে ধরে সালাম করলেন। মুস্তাফা ভাই কিছুটা অবাক হয়ে লোকটির কাছে জানতে চাইলেন আনোয়ার ভাইকে পায়ে ধরে সালাম করলেন কেন? লোকটি বেশ জোর দিয়ে বললেন- উনি তো নবাব সিরাজউদ্দৌলা। তাই নবাবকে তো পায়ে ধরেই সালাম করতে হবে। বুঝলাম, আনোয়ার ভাই সত্যিই দর্শকের মনে প্রকৃত নবাব হয়ে আছেন।

সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন


মন্তব্য করুন