ববিতা

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ডাগর-চোখের অসাধারণ সুন্দরী প্রতিভাবান অভিনেত্রী ববিতা। অভিনয়ের যোগ্যতায় তিনি বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে অভিনয় করেছেন ভারতীয় চলচ্চিত্রে, অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী বিখ্যাত বাঙ্গালী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সাথে।

অভিনেত্রী ববিতার আরেকটি পরিচয় হল তিনি অভিনেত্রী সুচন্দা এবং চম্পার বোন। তিন বোনের মধ্যে ববিতা মেজ। অভিনেত্রী বড় বোন সুচন্দার হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আগমন তার। ১৯৬৮ সালে জহির রায়হানের সংসার চলচ্চিত্রে ‘সুবর্ণা’ নামে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরবর্তীতে জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরুজ কি নীচে’ ছবিতে ববিতা নাম ধারণ করেন। পূর্ণ নায়িকা হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৯ সালে রাজ্জাকের বিপরীতে ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবির মাধ্যমে। ববিতা নাম ধারনের আগে তিনি কলম নামে একটি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছিলেন বলে জানা যায়। জহির রায়হানের দেখানো পথে শুরুর দিকে চললেও পরবর্তীতে স্বীয় অভিনয়গুণের কারণে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীদের সারিতে নিজেকে নিয়ে আসতে সক্ষম হন ববিতা। জহির রায়হান পরিচালিত ‘টাকা আনা পাই’ তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

১৯৭৩ সালে বিভুতিভূষন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিত রায় পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘অশনি সংকেত’ এ অভিনয় করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হন ববিতা এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উপস্থিত করেন। এই ছবিতে ববিতার অভিনয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, সত্যজিৎ রায়ের নির্দেশে ভারতীয় চিত্রগ্রাহক বাংলাদেশে এসে ববিতার প্রায় দুইশ ছবি তুলেন। এর কিছুদিন পরে ভারতীয় হাই কমিশনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক মনোনয়ের কথা জানিয়ে চিঠি আসে। পরবর্তীতে ববিতা বোন সুচন্দাসহ ভারতে সত্যজিৎ রায়ের সাথে দেখা করেন এবং সেখানে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা আলোচনার পর সত্যজিৎ রায় তাকে অনঙ্গ বউ চরিত্রের জন্য নির্বাচিত করেন। এই ছবিতে অভিনয় করে ববিতা একাধিক পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন।

শুরুর দিকে বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও পরবর্তীতে ববিতা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পুরোপুরি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে মনোনিবেশ করেন। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রবর্তন হলে তিনি টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। তার পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলো হল ‘বাঁদী থেকে বেগম’, ‘নয়নমনি’ ও ‘বসুন্ধরা’। পরবর্তী কালে তিনি ‘রামের সুমতি’ ছবির জন্য আরেকটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি আরও তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ‘পোকা মাকড়ের ঘরবসতি’ ছবি প্রযোজনার জন্য এবং ‘হাছন রাজা’ ও ‘কে আপন কে পর’ ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের জন্য।

ববিতার কৈশোর কেটেছে যশোরে। তার বাবা সরকারী চাকুরীজীবি ছিলেন। সুচন্দার অভিনয়ের কারণে তারা ঢাকায় স্থায়ী হন। এ কারণেই ববিতার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। তবে ব্যক্তিগত চেষ্টায় ববিতা শিক্ষিত হন, তিনি একাধিক ভাষায় কথা বলার দক্ষতাও অর্জন করেন। বড়বোন সুচন্দা এবং ছোট বোন চম্পা ছাড়াও একাধিক অভিনেতা অভিনেত্রী তার আত্মীয়। এদের মধ্যে ভগ্নিপতি জহির রায়হান, ভাগ্নে ওমর সানী, ভাগ্নেবউ মৌসুমী এবং চাচাতো ভাই রিয়াজ উল্লেখযোগ্য। ববিতার পিতা নিজামুদ্দীন আইয়ুব সরকারী কর্মকর্তা এবং মাতা বি জে আরা পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।

চিরসবুজ অভিনেতা জাফর ইকবালের সাথে ববিতার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীতে এ সম্পর্কের কোন সফল সমাপ্তি ঘটে নি। আশির দশকের শুরুতে ববিতা চট্টগ্রামের সন্তান চলচ্চিত্র পরিচালক ইফতেখারুল আলমকে বিয়ে করেন। তবে তাদের এ সংসার বেশিদিন টিকে নি। তাদের সন্তান অনিক। বর্তমানে অনিক কানাডায় থাকছেন। ববিতাও বছরের বেশিরভাগ সময় অনিকের সাথে কানাডায় অবস্থান করেন।

 

ব্যক্তিগত তথ্যাবলি

পুরো নাম ফরিদা আক্তার
ডাকনাম পপি
জন্ম তারিখ জুলাই ৩০, ১৯৫৫
জন্মস্থান বাগেরহাট
ভাই-বোন সুচন্দা, চম্পা

কর্মপরিধি

পুরষ্কার

পুরষ্কার বছর ফলাফল বিভাগ/গ্রহীতা চলচ্চিত্র
জয়ী শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বাঁদী থেকে বেগম
জয়ী শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নয়ন মনি
জয়ী শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী আলোর মিছিল